কবি সাবিনা ইয়াসমিনের আনুষ্ঠানিকভাবে সাহিত্য জগতে প্রবেশ ‘লোভ দেখালেও জুঁই-চন্দন’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে নব্বই দশকের শুরুতে। সে সময় থেকে তিন দশকেরও অধিককাল যে কবিতাগুলো বিভিন্ন বইয়ে মলাটবন্দি হয়েছে, তার মধ্য থেকে বাছাই করা কিছু কবিতা নিয়ে ‘আবৃত্তির কবিতা’ প্রকাশের প্রয়াস। ইত্যবসরে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। মৃত্যুবরণ করেছেন মিছিলের বহু সাথী। অতিমারী এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে হারিয়ে গেছে কত প্রিয়মুখ, যুদ্ধের দাবানলে নিঃশেষ হয়েছে কত প্রাণ এর সব কিছুই স্থান পেয়েছে এই ত্রিশ বছরেরও অধিককালে লেখা কবিতায়। এরই মাঝে মাতৃবিয়োগ-পরবর্তী লেখাগুলো সর্বজনীন মাতৃহারা সন্তানের শোকরূপে কিছু কবিতায় মূর্ত। শহীদ কন্যা সাবিনার কবিতার পঙ্ক্তিতে পঙ্ক্তিতে পিতাকে দেখতে না পাওয়ার যন্ত্রণা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেবার সংকল্প দৃশ্যমান। তবে এত কিছুর পরেও জ্যোৎস্নার মিহিদানার মতো অদ্ভুত কমনীয়তায় প্রেম জায়গা করে নিয়েছে আবৃত্তিযোগ্য কবিতাসমূহে। আবৃত্তির কবিতাগুলো কখনও বা আকারে হ্রস্ব, কখনও বা বেশ দীর্ঘ। সমসাময়িকতা, সমাজসচেতনতা এবং মৃত্তিকাসংলগ্নতা এসব কবিতার বৈশিষ্ট্য। কবিতা হলো পৃথিবীর আদি সৃষ্টির মাধ্যম। ভারতীয় আর্যদের প্রাচীন সাহিত্যভাষা বা বেদভাষা মূলত কবিতারই ভাষা। কালের পরিক্রমায় বাংলা ভাষার সবচেয়ে শক্তিশালী সৃজনশাখায় রূপ নিয়েছে বাংলা কবিতা। পাঠক কবিতা পড়েন নিজের ভালো লাগা থেকে। কিন্তু আবৃত্তিশিল্পীরা কণ্ঠে ধারণ করে এ শিল্পকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছেন। আবৃত্তি হয়ে উঠেছে বাচিক শিল্প। আবৃত্তি কবিতাকে দেয় নতুন প্রাণ। সকল বয়সের আবৃত্তিকারদের কাছে ‘সুরক্ষাকবচ’, ‘চৈতন্য’, ‘মায়া’, ‘বিচিত্র’, ‘পরিচয়’ এবং ‘সুহৃদ’ উপশিরোনামে ছয়টি পর্বে সাজানো নানা রসের কবিতায় সমৃদ্ধ ‘আবৃত্তির কবিতা’ পৌঁছে যাক কবিতা বাঁচুক আবৃত্তিতে, এই কামনা করি।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ মাহাতাব উদ্দীন মনির কন্যা স্বাধীনতার সমান বয়সী সাবিনা ইয়াসমিনের জন্ম খুলনার পাইকগাছায়। মা সালমা বেগমের সাহিত্যগ্ৰীতি ও অনুপ্রেরণায় তার সাহিত্যচর্চার শুরু। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্ৰশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য এবং বর্তমানে যশোর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে কর্মরত। স্বামী শরীফ হােসেন হায়দার বিসিএস (বিচার) ক্যাডারের সদস্য। পুত্র রুবাইয়াৎ ইশমাম প্রিয়ন্ত, কন্যা পুস্পিতা পারিজাত টিপা। খুলনা বেতারে তাঁর কয়েকটি নাটক প্রচারিত হয়েছে, জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে অনেক কবিতা ও ছোটগল্প।