বেড়ানো আমার সবসময়ই প্রিয়। ছোটকাল থেকেই। অনেকটা নেশার মতো। কোন পিকনিকে যাবো, সেটা যেন অনেক দূরে হয়। কাছাকাছি কোথাও হলে পিকনিকের আনন্দটাই মাটি! পিকনিকের খাওয়াটা মূল আনন্দ নয়, সবান্ধব আড্ডা দিতে দিতে যাওয়া, রাস্তার দু'পাশের দ্রুত অপসৃয়মান দৃশ্যাবলী ... দিগন্তজোড়া সবুজ ধানের ক্ষেত, সর্ষে ফুলের হলুদ গালিচা, বিস্তৃত মাঠের পারে অনেক দূরে একটি গ্রাম, অস্পষ্ট ভাবে দেখা যাওয়া সুউচ্চ এক কড়ই অথবা তাল গাছ ... দূরে কোথাও বেড়াতে যাব, যাত্রার শুরুতে মনে অপরিসীম উত্তেজনা। ট্রেন হোক, বাস হোক সর্বদাই চেষ্টা করেছি জানালার পাশে বসার। রাস্তা বা রেললাইনের পাশেই মাঠটিতে গুটিকয় ছেলে খেলায় মেতেছে, ছোট্ট একটি পুকুরের পাড়ে গাছপালা ঘেরা দু'টি ঘর, শুকনো কলাপাতার বেড়া ফাঁক করে তাকিয়ে রয়েছে লাজুক কোনও এক গৃহবধূ, সাথে ডুরে শাড়ি পরা এক কিশোরী। রাস্তার পাশের পুকুরে একদল দামাল ছেলের দাপাদাপি ... এই সব ছবি চোখ দিয়ে দেখি বটে কিন্তু তার ঠাঁই হয় মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের কুঠুরিতে। মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময় স্টিমারে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে সোনার আলো ঝরা গোধূলি শেষে সন্ধ্যা নামে, চরাচরে কী এক বিষন্ন সমাপনী আয়োজন! চারদিকে ঘনিয়ে আসছে বিপুল আঁধার, দূরে দু'য়েকটি বাড়ির ম্লান আলো অন্ধকারের রহস্যময়তা যেন বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। আশেপাশে বেশ কিছু চর, জনবসতিই হয়তো নেই, ছোপ ছোপ জমাট অন্ধকার, কত বছর বা যুগ ধরে কোনও মানুষের বাস নেই ওখানে, কখনো ছিল কী না কেই বা জানে। অন্ধকার, নীরব, ঝিঁঝি পোকার ডাক ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই ওখানে, কেমন ছিল সেখানে মানুষের জীবন! কেমন আছে সুদীর্ঘকাল মাটির গভীরে, এই নীরব ভূমিতে শুয়ে থাকা আমাদের পূর্বসূরীগণ!
ডা. হাসান সাঈদী খান। পেশায় নাক-কান-গলা ওঠা। চিকিৎসক। জন্ম খুলনায় ১৯৫৭ সালে। রংপুর চিনিকল আবাসিক এলাকায় বেড়ে ইন্টারমিডিয়েট পড়েছেন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে। তারপর বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়ন। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি, কখনো বা বিরতি। ছোটগল্প লিখেন মূলতঃ। ভ্রমণকাহিনী ও আটপৌরে জীবন নিয়েই বেশি লেখা। ২০২২ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে চিকিৎসক জীবনের অভিজ্ঞতা সম্বলিত গল্পগ্রন্থ "অন্তরালের কান্নাহাসি"।