রুশ লেখক ভেরা পানোভার অনবদ্য সৃষ্টি "পিতা ও পুত্র" এর সাথে কি এ লেখার মিল আছে! আছে, আবার নাই। আপন পুত্র নয় সেরিওজা। তথাপি পিতার হৃদয় নিঙড়ানো অপত্য স্নেহ-ভালোবাসা কালজয়ী ধ্রপদী হয়ে রইল। এখানে খ্যাতিমান শিক্ষক এবং শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব জনাব জছির উদ্দিন আহমেদের কনিষ্ঠ পুত্র সদর উদ্দিন আহমেদ বেড়ে উঠেছেন অনেকটা একাকি, প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে। এই নির্জনতা তাকে ভাবিয়েছে, করেছে ভাবুক। আবার তাকে বুঝিয়েছে জীবন। বুঝিয়েছে অমসৃণ বন্ধুর পথপরিক্রমার ধৈর্যশীল মনোভাব তথা জীবন মোকাবেলার নিজস্ব একক ভঙ্গিমা। এ লেখার শুরু ১৯৬১ সালে নিজের এবং পিতার স্মৃতি একসূত্রে গেঁথে। আবার শেষ হয়েছে ১৯৮৩ সালে পিতৃবিয়োগের মর্মন্তুদ এবং হৃদয়স্পর্শী অভিব্যক্তি দিয়ে, যা পাঠককে নাড়া দেয়; করে আপ্লুত। বলা যায় এটি 'স্মৃতির দলিল। হ্যাঁ, এতে স্মৃতিচারণ করা হয়েছে, ঘটনাপরম্পরা উপস্থাপিত হয়েছে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায়। গভীর মমতায়, অত্যন্ত প্রাঞ্জল অথচ ঋজু ভঙ্গিমায়। লেখক অনুপ্রাণিত এবং সমৃদ্ধ হয়েছেন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে। শাহিন কলেজের অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ, অর্থনীতির অধ্যাপক মোশাররফ হোসাইন, অধ্যাপক আবু মাহমুদ, অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ এবং অধ্যাপক রেহমান সোবহান প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব তাকে সমৃৃদ্ধ করেছেন, প্রভাবিতও করেছেন। তাছাড়া একসময় তিনি প্রভাবিত হয়েছেন তখনকার অপাঙক্তেয়, দূরের মানুষ অধ্যাপক ড. ইউনুসের কল্যাণমুখী কর্মকার দ্বারাও। এ বইয়ে প্রকৃতি এবং পরিবেশ বর্ণনায় মুন্সিয়ানার ছাপ দেখার মতো। লেখা হয়েছে প্রায় নিরাসক্ত, নির্লিপ্ত বিশেষ এক স্টাইলে। যেন কথা বলছেন ঘটমান বর্তমানে এক ঘোরলাগা সময়ের ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে। মুগ্ধ পাঠক চলেছে সাথে, তালে তালে; সকালে, কি বিকালে।