কালপর্বের বিচারে ভারতের মধ্যযুগকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা কষ্টসাধ্য। কারণ ইউরোপে পনের শতকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় রকমের পট পরিবর্তিত হয়েছিল। ফলে সে সময়ে স্পষ্টতই যুগ বিভাজন করা সম্ভব হয়। তবে এ বিষয়টি ঠিক যে সময়-পরিধি নির্বাচন করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের যুগ পরিবর্তন চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। কারণ ইউরোপে যখন মধ্যযুগ বিরাজ করছিল তখনো প্রাচীন যুগের পরিপূর্ণ অবসান ঘটেনি ভারত উপমহাদেশে। আবার তের শতকে ভারতবর্ষে যখন ঘোরতর মধ্যযুগ তখন ইউরোপ প্রস্তুতি নিচ্ছে আধুনিকযুগে উত্তরণের। সুতরাং যুগ বিভাজন করা হয় সময় বিচারে নয়-চরিত্র বিচারে। আর এই চরিত্র মূলত নির্ধারিত হয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিধি-ব্যবস্থার পরিবর্তনের সূত্র ধরে। পাঁচ শতকের শেষপর্বে • ইউরোপে অবসান ঘটে প্রাচীন সভ্যতার। মূলত এই সময়ে প্রাচীন রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক ধরনের ভাঙ্গন দেখা দেয়। দাস শ্রমনির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছয় শতকের ইউরোপীয় রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না। ফলে পরিবর্তিত অবস্থায় নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে সামন্ত প্রথার উদ্ভব ঘটে। এরই সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রব্যবস্থায় আসে পরিবর্তন। মধ্যযুগের লক্ষণ ফুটে ওঠে এভাবেই। সময়ের বিচারে ইউরোপের অনুষঙ্গী হয়ে একই লক্ষণের উন্মেষ ঘটায় ভারত উপমহাদেশও। গুপ্ত শাসনব্যবস্থার ভাঙ্গনের মধ্য দিয়ে মধ্যযুগের চরিত্র প্রকাশ পেতে থাকে ভারতবর্ষে।
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ১৯৬০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার গনাইসার গ্রামে। পিতা মরহুম মোসলেম চোকদার ও মা মরহুমা রেজিয়া বেগম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ফারসি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স সম্পাদন করেন। ১৯৮৫ সালে। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি. অর্জন করেন ১৯৯৪ সালে। সত্তর ও আশির দশকে ‘শাহনাজ কালাম’ লেখক নামে ছড়া ও গল্প লিখিয়ে হিসেবে পরিচিত হলেও পেশা জীবনে এসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠক্রমভিত্তিক গ্রন্থ রচনা এবং শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক গ্ৰন্থ ও প্ৰবন্ধ লেখায় বিশেষ মনোনিবেশ করেন। ড. শাহনাওয়াজের রচিত ও সম্পাদনাকৃত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এক যুগের বেশি সময়কাল ধরে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে রাজনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ক কলাম লিখে আসছেন।