অন্তঃপুরের মেয়েরা যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই ভয় পেত, তখন তিনি ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে বের হয়েছেন। রক্ষণশীল সমাজের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করেছেন। কখনো ঢিল এসে পড়েছে গায়ে; বাড়িতে এসে বলেননি সে কথা, বাইরে বেরোনোর নিষেধাজ্ঞার ভয়ে! ছবি ছেপে রোষে পড়েছেন, বাড়ির সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু ক্যামেরাটা তিনি হাতছাড়া করেননি। ছবি তুলে দেশে-বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছেন। জায়গা করে নিয়েছেন অনেক গুণীজনের অন্তর আত্মায়। ত্রিশ বছর তিনি সত্যজিৎ রায়ের ছবি তুলেছেন, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সত্যজিৎ তাঁকে স্নেহভরে ডাকতেন ‘বাদল’, আর তিনি ডাকতেন ‘মানিকদা’। সত্যজিতের কাছে তিনিই যেন বাংলাদেশ। তাঁর জন্য ছবি তোলায় কখনো নিষেধ ছিল না সত্যজিতের শুটিং স্পট থেকে অন্দরমহল পর্যন্ত। সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ তাঁকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মাইহারে, সরোদ শেখানোর জন্য। স্বাস্থ্যগত কারণে সে আহ্বান গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি তাঁর। ছবি তুলেছেন নজরুলের, জয়নুলের, বঙ্গবন্ধুর, চাঁদে পা রাখা তিন নভোচারীর। রানি এলিজাবেথ, মাদার তেরেসা, ইন্দিরা গান্ধী, কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়; আরও কত কত বিখ্যাত মানুষ তাঁর ক্যামেরার সামনে নিজেদের তুলে ধরেছেন। ‘বেগম’ পত্রিকায় সংবাদচিত্রী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন পঞ্চাশের দশকের রুদ্ধ সময়ে। গল্প লিখতে শুরু করেছিলেন তারও আগে। বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী তিনি। ক্যামেরা হাতে থাকা এই সাহসী মানুষটির নাম—সাইদা খানম।
Shahadat Parvez- খ্যাতিমান আলোকচিত্রী, আলোকচিত্রকলার শিক্ষক ও পরামর্শক। জন্ম ১৯৭৭ সালের ৮ অক্টোবর, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচরে। কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখির শুরু। এই সময় ছবি তোলার নেশাও পেয়ে বসে। একসময় মনে হয়, আলোকচিত্রই উপযুক্ত পেশা। পাঠশালাÑদ্য সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমি থেকে ফটোসাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ চিত্রসাংবাদিক। পেয়েছেন আশাহি সিম্বুন স্বর্ণপদক, এশিয়া প্রেস ফটো স্বর্ণপদক, এশিয়া প্যাসিফিক কালচারাল সেন্টার ফর ইউনেসকো পদকসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার। কবিতার বই যে ছবি দিয়ে আঁকা প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে, কলেজে পড়ার সময়। ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় ফটো অ্যালবাম শতবর্ষের পথিক। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় গবেষণধর্মী গ্রন্থ শেকড়ের খোঁজে।