নারীর আধ্যাত্মিক সাধনপন্থার ঐতিহ্য বর্ণাঢ্য হলেও তাদেরকে নিয়ে বাংলায় লেখালেখি দুর্লভ। এশিয়ায় জন্ম নেওয়া খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ অব্দ থেকে আধুনিক যুগের সূচনাকালের ৩৬ জন নারীসাধকের পরিচিতি ও তাঁদের প্রতিনিধিত্বমূলক কিছু কবিতা এখানে সংকলন ও ভাষান্তর করা হয়েছে। অতীন্দ্রিয়বাদী ও ধ্যানমগ্ন এ কবিদের সাধনপন্থা আলাদা ও বৈচিত্র্যময় হলেও প্রথাগত ধর্মচর্চার ব্যহ্যিক সীমা পার হয়ে একটি বিন্দুতে এসে তাঁরা এক হয়েছেন, মিলেমিশে গেছেন গহিন মরমি ভাবধারায়, গভীর ঐক্যে তাঁদের সম্মিলিত স্বরে একটি সুরই প্রাণ পেয়েছে, সে সুর ভালোবাসার। নিজেকে চেনা-জানা-বোঝার জন্য যে অনুসন্ধান, তাতে প্রজ্ঞার সাথে শান্তি ও স্থিতির সূত্রসন্ধানও ঘটে। পরমাত্মাই হোক বা বিশ্বপ্রকৃতি, জীবাত্মার সাথে তাকে এক করে দেখার যে উপলব্ধি, তা মানুষকে আরও গভীরতর ও উচ্চতর মানবিক স্তরে পৌঁছে দেয়। আধ্যাত্মিকতার ইতিহাস তাই নারী বা পুরুষ, বর্ণ কিংবা জাতির সংকীর্ণতাকে ছাড়িয়ে ঐক্য ও সমন্বয়ের পথে মানুষের নিবেদনেরই ইতিহাস, সে বোধটিই সমগ্র গ্রন্থ জুড়ে পাঠক পাবেন। মূলত দরবারি ভাষা-সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে, প্রচলিত অনুশাসন ভেঙে সহজ ভাষায় সমাজের তলানিতে থাকা সাধারণ মানুষের শব্দ ও ভাষায় সাধনা করেছেন এ নারীসাধক-কবিরা। সাধারণ মানুষও তাঁদেরকে গ্রহণ করেছেন। তাঁদের মাঝে সন্ধান পেয়েছেন প্রাত্যহিক জাগতিক বোধ থেকে উর্ধ্বে উঠে অতীন্দ্রিয়ের স্পর্শের অনুভূতি। এ কারণেই যুগ কিংবা শতক শুধু নয়, সহস্রাব্দ পেরিয়ে গেলেও তাঁদের কবিতার আবেদন এখনো অম্লান। পাশাপাশি ধর্ম, লিঙ্গের সীমারেখা ছাড়িয়ে সাধকের সর্বজনীন হয়ে ওঠার বয়ান পাওয়া যাবে তাঁদের জীবনের গল্পে।