অনুবাদকের কথা: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ফেনীতে অবস্থানকারী মার্কিন মিশনারী জিম ম্যাকিনলে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসমূহ লিপিবদ্ধ করেছেন এই গ্রন্থে। কর্মের সূত্রে বাঙালী জীবনের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় ঘনিষ্ঠতা, বাংলা ভাষায় তিনি বিশেষ দক্ষ এবং যুদ্ধকালীন অবরুদ্ধ নয় মাস ব্যাপকভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুধু বিদেশী নন, মার্কিন দেশের নাগরিক তিনি, সেই সুবাদে পাকবাহিনী তাঁকে কিছুটা সমীহ করে চললেও যুদ্ধরত দেশের নানা বিপদের আশংকা থেকে মুক্ত ছিল না তাঁর অবস্থান। তা সত্ত্বেও তিনি সপরিবারে থেকে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে, অপরাপর বিদেশীরা যখন দেশত্যাগ করেছেন, এমন কি ডিসেম্বরের সেই সর্বাত্মক যুদ্ধের সময়েও, জিম ম্যাকিনলে তখন স্ত্রী-পুত্র- কন্যাদের নিয়ে রয়ে গিয়েছেন ঢাকায়। এক গভীর মানবিক বোধ থেকে তিনি চিত্রিত করেছেন যুদ্ধকালীন বাংলাদেশকে, মিশেছেন যেমন সাধারণজন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তেমনি পাকবাহিনীর সদস্য ও অনুগত দালালদেরও দেখেছেন খুব কাছ থেকে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্ররূপ আমরা পাই তাঁর গ্রন্থে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম গোটা বিশ্বসমাজকে আলোড়িত করেছিল প্রবলভাবে। যদিও পশ্চিমী ক্ষমতাবান শাসকগোষ্ঠীরা প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়ভাবে বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামের বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল তা সত্ত্বেও সবুজ মাটির দেশে গণহত্যার রক্তগঙ্গা এবং প্রতিরোধের প্রবল জাগরণ স্পর্শ করেছিল বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয়। পরাক্রমী অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভবুদ্ধি, মানবিকতা ও কল্যাণবোধের যে আদর্শ তার পরিপ্রকাশ আমরা দেখি এই মার্কিন মিশনারীর মধ্যে। জিম ম্যাকিনলের কথকতায় ফিরে পাই অতীত গৌরবদীপ্ত দিনগুলোকে যা আজ নানা ষড়যন্ত্র ও অশুভ চক্রান্তজালে ঢাকা পড়ার উপক্রম। জিম ম্যাকিনলের সূত্রে আবার নতুন করে জেগে উঠুক বাঙালীর বীরত্বময় স্মৃতি, যুদ্ধজয়ের সাহসী গাথা। মফিদুল হক