ভোলা থেকে ঢাকায় আসেন আশরাফ মিয়া। তিনি আসেন মূলত চাকরির খোঁজে। ভোলায় রেখে আসেন তাঁর সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী শিউলিকে। কথা দিয়ে আসেন, একটা চাকরি পেয়েই তিনি শিউলিকে এখানে নিয়ে আসবেন। বড় দেখে একটা বাসা নিবেন। পাখির মতন একটা সংসার সাজাবেন। ঢাকায় এসে আশরাফ মিয়া একটা সাবলেট রুম ভাড়া নেন। সেখানে থেকেই এখানে ওখানে দৌড়ে চাকরি খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু এই শহরে তাঁর কোনো চেনাজানা না থাকার কারণে চাকরি হয়নি তাঁর। পরিচিত হন মজিবর মিয়ার সাথে। মজিবর মিয়া তাঁকে দিয়ে যত অপকর্ম আছে তার সবই করাতে শুরু করে। মজিবর মিয়া আর না ফিরে আসায় আশরাফ মিয়া তার ওখানে থেকে চলে আসেন ফার্মগেট। এখানে এসেই পরিচয় ঘটে জয়নাল হাজারীর সঙ্গে। তিনি আশরাফ মিয়াকে এনে তাঁর হোটেলে কাজ দেন। আশরাফ মিয়াও খুব যত্ন সহকারে তা করতে শুরু করেন। তখন অবধি আশরাফ মিয়া জানতেন না এখানে আসলে কি করা হয়! কিন্তু হঠাৎ একদিন এই একই হোটেলে আশরাফ মিয়া দেখতে পান তাঁর স্ত্রী শিউলিকে। দেখে তাঁর দু'চোখ বড় বড় হয়ে উঠে। এটা দেখার জন্য কোনো কল্পনা ছিলো না তাঁর। তারপরই ঘটে যায় তাঁর জীবনে সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা। যে দূর্ঘটনা তাঁর পুরো জীবনটাকেই এলোমেলো করে দেয়, ঝড়ের মতোন, এক সমুদ্র অস্থিরতা সমান।
আরিফ খন্দকার। বুকের ভেতর অজস্র গল্প বয়ে বেড়ান। মানুষের গল্প, জীবনের গল্প। সেইসব গল্পই তিনি বলে যেতে চান কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে। তাইতো একের পর এক লিখে চলছেন। আমৃত্যু লিখে যেতে চান। তাঁর লেখা যখন বই আকারে প্রকাশ হয় তখন তাঁর কাছে মনে হয় এটা একটা বই-ই না। আসলে এটা একটা মানুষ, এটা একটা জীবন। এভাবেই তিনি মানুষ, জীবন তৈরি করে চলছেন ২০১৫ সাল থেকে। ২০১৫ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশ হয় তাঁর প্রথম বই। এখন পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৬। দুটো কাব্যগ্রন্থ ও চৌদ্দটি উপন্যাস। তাঁর কাছে এই ষোলোটিকে বই মনে হয় না। মনে হয় মানুষ, মনে হয় জীবন। এই ষোলোজন মানুষ পাঠকের দুয়ারে ঘুরে ঘুরে তারা তাদের জীবনের গল্প শুনায়। এভাবে আরো মানুষ তৈরি করায় ব্যস্ত তিনি শুধুমাত্র তাদের জীবনের গল্প পাঠকরা শুনবে বলে। মানুষ ও জীবন তৈরি করার এই মানুষটির জন্ম ২৩ আগস্ট ১৯৯৭ সালে নরসিংদী শহরে। খুব ছোটবেলা থেকেই তাঁর বই পড়া শুরু। বই পড়তে পড়তে যখন তাঁর মনে হলো তাঁর ভেতর নদীর জলের মতো তিরতির করে গল্প বয়ে বড়াতে শুরু করছে তখনই তিনি লিখতে শুরু করেন। শুরুটা ছোটগল্প দিয়ে হলেও কবিতা ও উপন্যাস লিখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাঁর কাছে মনে হয় কবিতা ও উপন্যাসে মানুষের জীবন যতটা গভীরভাবে অনুধাবন করা যায় ততটা গভীরভাবে আর কোনোকিছুতে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কারণ কবিতা ও উপন্যাসই মানুষের কথা বলে, জীবনের কথা বলে। বলতে বলতে আবার মানুষ হয়, জীবনও হয়। এই মানুষ আর এই জীবন দেখতেই খুব পছন্দ করেন তিনি। তাইতো সবকিছু থাকা সত্ত্বেও একা, নিঃসঙ্গ হয়ে আছেন লেখা নিয়ে। অবশ্য এটাকে একা, নিঃসঙ্গও বলা যায় না, বলা যায় তিনি মানুষের ভিড়ে জীবনের গল্প বলায় ব্যস্ত।