ভ্রমণ গদ্য- 'তিনটি তারার তীর্থে'। তিন তারা বলতে লেখক লিথুয়েনিয়া, লাটভিয়া, এস্টোনিয়া বুঝিয়েছেন। বাল্টিক সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে আছে এই ত্রয়ী। ভ্রমণ গল্পে ইতিহাস উঠে এসেছে পরিষ্কারভাবে এবং প্রাসঙ্গিকভাবে। মানুষের চিরাচরিত স্বাধীনতার স্পৃহার ইতিহাস। বাল্টিক ভূখণ্ড বার বার শাসিত হয়েছে। কখনো সোভিয়েত আগ্রাসন, ফের হিটলারের দখলদারি, আবার ফিরে আসা সোভিয়েত হুকুম, পাঠকদের মনে করিয়ে দেবে জাতিসত্তা বিনির্মাণের ক্ষত। লেখক প্রথম পা ফেলেছেন লিথুয়েনিয়ায়। শুরুতেই প্রকাশিত হয়েছে নাটকীয়তা। বর্ণবাদের মতো দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়েছেন বাংলাদেশী ভ্রামণিক দল। এ কালেও বর্ণবাদ স্পষ্ট, যা বিস্মিত করবে পাঠকদের। উজুপিসে প্রবেশ ছিল বেশ চমকপ্রদ। হঠাৎ করে নদী পেরোলেই আরেকটি দেশ, আরেকটি পতাকা এবং আরেকটি সংবিধান, এ তথ্য বহু বাঙালির কাছে নতুন ঠেকবে। দ্বিতীয় পর্ব লাটভিয়াকে নিয়ে। লাটভিয়া ভ্রমণের শুরুতেই লিথুয়েনিয়ার জাতীয় কবির একখানি কবিতার লেখক কর্তৃক ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ পাঠকদের ভিন্ন স্বাদ এনে দেবে। অনুবাদ দুঃসাহসিকতাতেও লেখক সফল। রিগা শহরের টুকরো টুকরো মজার গল্প কিংবা ঘটনা কিছুটা ভিন্ন কায়দায় লেখা হয়েছে; বোঝা যায় লেখকের দৃষ্টি প্রখর থাকে ভ্রমণে, বিরল নান্দনিকতা লেখকের চোখ এড়ায় না। তৃতীয় পর্ব এস্টোনিয়া ভ্রমণ নিয়ে। একটি নিরানন্দ ঘটনা দিয়ে শুরু হয় তালিন ভ্রমণ। সমুদ্র দেখে স্বপ্ন ভাঙ্গার নিরানন্দ। লেখক চিত্রকলা না বুঝলেও এস্টোনিয়ার ক্যাথরিনস্-স্টেপ বেয়ে উপরে উঠে দেখা চিত্রগুলির বর্ণনা ছিল বেশ প্রাঞ্জল। তিনি সোভিয়েত সময়কালের ছবিগুলিকে ব্যাখ্যা করেছেন বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথে। বাল্টিক অঞ্চলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত বোঝার জন্য এ ভ্রমণ গদ্য ভালো দিক নির্দেশনা হয়ে থাকবে।