জীবনের তারুণ্যের প্রথম প্রহর থেকে, দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি পথ চলা। এই অবিরাম পথ চলায় আমার একমাত্র সম্বল, আমার দেশ এবং আপনাদের গভীর ভালোবাসা। এই ভালোবাসা পেয়ে আমি ধন্য। কারণ আজকের সুচন্দা অতো সহজে হয়নি। কলেজে পড়া অবস্থায় চলচ্চিত্রে আগমন। সেই সময়ে সামাজিক এবং রক্ষণশীল পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকে বেরিয়ে এসে চলচ্চিত্রে অভিনয় করাটা বিশাল ব্যাপার ছিল। তখন জানতাম না, কি আমি করতে পারবো, আমার ভবিষ্যৎ কি। সেদিন জানতাম না ক্যামেরা, আলো ঝলমল লাইটের সামনে কীভাবে অভিব্যক্তিকে ফুটিয়ে তুলতে হয়। সাহস করে অজানার পথে পা বাড়ালাম। ধৈর্য্য, সাধনা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা আর নিজের মেধা দিয়ে ধীরে ধীরে পথ চলতে শুরু করলাম। তারপর বুঝতে পারলাম চলচ্চিত্রে কাজ করা সম্পর্কে মানুষের একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, যা সত্য নয়। তাই ছোট দুই বোন ববিতা, চম্পাকেও নিয়ে এলাম এই অঙ্গনে। আমার এই দীর্ঘ পথ চলায় সমকালকে সেলুলয়েড ফিল্মে ধারণ করে সময়ের সীমান্ত অতিক্রম করেছি। ঐতিহাসিক '৬৯ ও '৭০-এর গণআন্দোলনকে ধারণ করেছি আগামী প্রজন্মের জন্য। এটা ইতিহাসের কাছে আমার দায়বদ্ধতা। মহান '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পরে, যখন একটি সদ্য স্বাধীন জাতি নতুন করে সৃষ্টির স্বপ্ন দেখছে, ঠিক তখনই একজন সুচন্দা এই আমি, স্বপ্নের মিছিলে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু স্বপ্ন দেখার শুরুতেই স্বপ্ন ঝরে গেল। হারিয়ে গেলেন সুরিয়াল চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান। সমাজ ও জীবনের এতসব অস্থিরতার মাঝেও বিরামহীন পথ চলেছি সৃষ্টির উল্লাসে- দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য। একজন শিল্পীর সোশ্যাল কমিটমেন্ট অনেক বড়। আর তাই ঘুমাবার সময় নাই, যেতে হবে বহু দূর। জীবন চলমান, তার পথের শেষ নেই। And miles to go before sleep.