[হেমন্তের বেলা ন-টা। পানির শব্দ, দূরে জাহাজের সিটি-ধ্বনি, তীরে ফিরিওয়ালার হাঁকাহাঁকি, ভাটিয়ালি গানের অতি ক্ষীণ রেশ ইত্যাদির সমবেত কোলাহলের মধ্যে পর্দা উঠলে দেখা যাবে মঞ্চের অধিকাংশ স্থান জুড়ে দু-কামরাওয়ালা একটি রংদার বজরা। কোণে সামান্য উঁচু পাড়, বজরা থেকে সে পাড়ে যাতায়াতের জন্য একটা সিঁড়ি। দর্শকের দিকে বজরাটি খোলা। পেছনে জানলাগুলির অধিকাংশ তোলা, যার ভেতর দিয়ে অপর পারের আভাস ও কিছুটা পানি দেখা যাবে। বজরার সামনে পাটাতনে বসে একটি চাকর মসলা পেষে; একটু দূরে একজন মাঝি আপন মনে দড়ি পাকায়। তারই কাছাকাছি বসে হকিকুল্লাহ্ হুঁকা টানে। ছাতে শুকায় একটি রঙিন আলখাল্লা ও পায়জামা। বড় কামরায় হাতেম আলী চাদরে আধা-শরীর ঢেকে বহিপীরের সঙ্গে কথোপকথন করেন। তাঁর বয়স পঞ্চাশের মতো, মুখে চিন্তার ছাপ। কথা বলতে-বলতে হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন। বহিপীরের বয়স কিছু বেশি কিন্তু মজবুত শরীর। মুখে আধা-পাকা দাড়ি, মাথায় চুল ছোট করে ছাঁটা। পাশের ঘরে হাতেম আলীর ছেলে হাশেম আলী মোড়ায় বসে-বসে তার মা খোদেজা ও তাহেরার তরকারি কোটা দেখে। হাশেম আলী যুবক মানুষ; অস্থিরমতি আর একটুতে রেগে ওঠার অভ্যাস। কখনো সে পায়চারি করে, কখনো বসে, কখনো-বা লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। জানালার ধারে বিছানা পাতা বেঞ্চির ওপর।
হায়াৎ মামুদের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার মৌড়া নামে আখ্যাত এক গ্রামে, ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১৭ আষাঢ় (২রা জুলাই ১৯৩৯) তারিখে । ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অভিঘাতে মানসিকভাবে বিপর্যন্ত পিতার হাত ধরে চলে আসতে হয় ঢাকা শহরে । অদ্যাবধি সেখানেই বসবাস । স্কুল-কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন এ শহরেই। পিএইচ. ডি. ডিগ্রি তুলনামূলক সাহিত্যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, প্ৰায় প্রৌঢ় বয়সে। রুশ ভাষা অল্পবিস্তর জানেন, অনুবাদের চাকরি করেছেন প্ৰগতি প্ৰকাশনে, মস্কোয়-সুদূর ও স্বপ্রিল সোভিয়েত ইউনিয়নে বসে । দেশের অভ্যন্তরে চাকরি সর্বদাই শিক্ষকতার-প্ৰথমে কলেজে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে । বর্তমানে অবসর-জীবন যাপন করছেন। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন শিশুসাহিত্যে । দেশ-বিদেশের সারস্বত সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ আছে । সমালোচনা, ছাত্রপাঠ্য বই ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ষাটেরও বেশি।