ইতিহাস কখনো অন্যের সহযোগিতা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় না। নাটকের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনাদের বেলায় তা আরো কঠিন রূপ নিয়েছে নানা কারণে। যা পাঠোদ্ধারে অনুমান করা যাবে। যা কিছু ভুলত্রুটি থাকা-তা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করার ইচ্ছা রইল। তদুপরি যেসব উৎস থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি এই ইতিহাসকে সমৃদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পাঠকের কৌতূহল মেটাতে এক মলাটে অনেক কিছু সবার কাছে পৌঁছে দিতে সর্বোপরি মহান স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদ্যাপনে আবার নতুন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মের সাথে কন্ধ হতে- সবার কাছে ঋণ স্বীকারসহ জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ১৯৫২-১৯৭১ পর্যন্ত রাজপথে রক্ত ঝরানো এ-ইতিহাসটি রচনাক্রমে সম্পাদনা করতে গিয়ে বেদনায় আপ্লুত হয়েছি। এ কারণে যত বেশি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ইতিহাস চর্চা বাড়বে অনিবার্য তত বেশি রাষ্ট্রের নাগরিকের দেশপ্রেম উন্নত স্তরে পৌঁছবে। এবং দেশপ্রেমই সকল উন্নয়নের একমাত্র চাবিকাঠি দেশপ্রেম বাড়লে দুর্নীতি, অবৈধ উচ্চ বিলাসিতা প্রতিরোধ করা সম্ভব যে দুর্নীতি উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। দলমত-নির্বিশেষে অনেকের প্রত্যাশা- মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধসহ ৫০ বছরের বাংলাদেশকে মূল্যায়নে চোখে নানাভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। দেখতে হবে সমাজতন্ত্র ও কারণ ১৯৭২-প্রথম সংবিধানে সমাজতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে প্রণীত হয়েছিল বলে তার প্রতি মূল্যবোধ দিয়ে নতুন করে মূল্যায়ন আবশ্যক। আবশ্যক আমাদের এক হাজার পৃষ্ঠার আধুনিক সংবিধান। এজন্য গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ অনেকবার সংবিধান কাটাছেঁড়া হয়েছে- খুব নিন্দনীয়ভাবে-যা নাকি সংবিধানের পবিত্রতাও নষ্ট করেছে। ৫০ বছর পূর্তিতে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন সফল করতে হবে-এ ৫০ বছরে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি বিবেচনায় রাখতে হবে শত ভাগ। কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, অন্ন-বস্ত্র ও আইন-শৃঙ্খলাসহ বিচারিক শতভাগ নিরাপত্তা নিয়ে মৌলিক চাহিদাসহ ৬০টি মন্ত্রণালয়কে শত ভাগ দুর্নীতিমুক্ত ও কার্যকর করতে হবে। এর মধ্যে বিচারব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষিত হয়ে যুবকরা বেকার হচ্ছে কেন? শিক্ষিত হয় মানুষ কর্ম লাভ করার জন্য বা উপার্জনশীল কর্ম প্রাপ্তির জন্য। একাত্তরের রাজাকার বেঈমান বিশ্বাস ঘাতক দালালেরা- এ গ্রন্থের সাথে লেখকের রয়েছে অন্যান্য গ্রন্থ 'নারী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১', 'ভাগীরথী সাহা ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ নাটক', 'বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১', 'কবিতা সমগ্র', 'নির্বাচিত কবিতা', শ্রেষ্ঠ কবিতাসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রন্থ। সাহিত্যের সব শাখায় লেখালেখিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরস্কারপ্রাপ্তিও রয়েছে; তার মধ্যে পুরুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ রয়েছে। যেমন '১৯৭১-এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট'। আসলে নারী পুরুষ একত্রেই চলছে সভ্যতার শুরু থেকে সংগ্রামে সহাবস্থানে। তেমন একটা আলাদা চোখে দেখার সুযোগ নেই। নারীর প্রতি সম্মানবোধ সম্ভ্রমবোধের কারণে আমাদের শান্তির জন্য নারীর মূল্যায়নে দায়িত্ববোধ একটু বেশি। এবং অনিবার্য কারণে নারীরা তাদের মহিমান্বিত প্রাকৃতিক গুণ নিয়েই ১৯৭১-এ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি গোয়েন্দা, মেডিকেল নার্সিং সেবা দিয়েছে, রান্না বান্না করেছে ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীরাঙ্গনাদের পদমর্যাদা দিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা পদে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন।