বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উজ্জ্বল ও ব্যতিক্রমী অধ্যায় নৌ-কমান্ডো অভিযান। একাত্তরের মধ্য-আগস্টে দেশের বিভিন্ন সমুদ্র ও নৌবন্দরে অভাবিত ও আকস্মিক যুগপৎ আক্রমণ নিমেষে পাল্টে দেয় যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি। জীবন উৎসর্গ করবার অঙ্গীকার নিয়ে আত্মঘাতী কমান্ডো-দলে যোগ দিয়েছিলেন এক ঝাঁক তরুণ। তাঁদেরই একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন ছাত্র মো. আজিজুল আলম, প্রায় ৫০ বছর পর মেলে ধরেছেন নৌ-অভিযানের পূর্বাপর বৃত্তান্ত তাঁর লেখা 'একাত্তরের মৃত্যুঞ্জয়ী নৌ-কমান্ডো' গ্রন্থে। এ গ্রন্থটি পাঠক সমাজে যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে, তবে পাঠক সমাজের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে নৌ-কমান্ডো বাহিনীর পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস তুলে ধরার। তাঁদের সেই দাবির প্রেক্ষিতে লেখক বাংলাদেশ নৌ-কমান্ডো বাহিনীর সকল সদস্যের দুঃসাহসিক অভিযানের এক বীরত্ব গাঁথা তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। লেখক ছাত্র আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহস্পর্শ, গোড়াতেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে, তারপরে চরম গোপনীয়তায় নৌ-কমান্ডো হিসেবে গ্রহণ করেন প্রশিক্ষণ এবং দেশের ভেতরে পরিচালনা করেন দুঃসাহসিক বিভিন্ন অভিযান। সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় দেশের মুক্তির এই অভিযানের প্রত্যক্ষ বিবরণ সজীব করে তুলেছে অবিস্মরণীয় সেই দিনগুলো, যখন বাংলার তরুণ দল করেছিলেন অসাধ্য সাধন। এই স্মৃতিভাষ্য তাই কেবল সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের বৃত্তান্তই নয়, কষ্টিপাথরে মুক্তিযুদ্ধ যাচাই করে নেয়ার প্রয়াস ও বটে। সব ছাপিয়ে এখানে পাওয়া গেছে মানবিক অনেক ঘটনার বিবরণ যা আপ্লুত করেছে এবং ভবিষ্যতে করবে পাঠকের হৃদয়। নবীন প্রজন্মের জন্য এই গ্রন্থ বিশেষভাবে পাঠ্য, বাংলার মানুষ, সমাজ ও ইতিহাসের পরিচয় পেতে এর তুলনা নেই।