গত এক দশকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সারাদেশে কয়েক হাজার বই পেরিয়েছে। ১৯৭২ থেকে ২০০৭-০৮ সাল পর্যন্ত বইয়ের সংখ্যা ছিল অনেক কম। ২০১৪ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা হাসিনার আমলে বঙ্গবন্ধু চর্চার পুনর্জীবন ঘটে। ২০২০ সালে তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হয়। এবং এ উপলক্ষে প্রচুর বইপত্র প্রকাশিত হয় এবং সে ধারা এখনও বহমান। এতো বই প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর একটি তথ্যপূর্ণ ধারাবাহিক জীবনী গ্রন্থের ছিল অভাব। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে যে দু'একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি তা নয়। কিন্তু, সেগুলি একই তথ্যে ভরা, একই গ্রন্থের পুনরাবৃত্তি। এ অভাব পূরণে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশের ইতিহাসবিদ ও লেখক ড. মুনতাসীর মামুন। তিনি নতুন তথ্য, নতুন ব্যাখ্যা, নতুন পদ্ধতিতে বঙ্গবন্ধু জীবনী লেখা শুরু করেন- বঙ্গবন্ধুর জীবন নাম দিয়ে। ২০১৯ সালে এর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ২০২৩ সালে ষষ্ঠ খণ্ড প্রকাশের মাধ্যমে এ জীবনী গ্রন্থ শেষ হয়। বঙ্গবন্ধুর জীবন ১৯২০-১৯৭১ এ ছয় খণ্ডের পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত রূপ। এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে এ ধরণের নতুন ও বৃহৎ গ্রন্থ প্রকাশিত হলো। বাংলাদেশের কিংবদন্তী ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ছাড়া এ গ্রন্থ কারো পক্ষে লেখা সম্ভব হতো কিনা জানি না।
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।