কিছু মনে করবেন না, আপনাকে প্রথম দেখছি! আমাকে বলছেন! আশপাশে তো আবার কাউকে দেখছি না। তাহলে তো মনে হচ্ছে আমাকেই বলছেন। হ্যাঁ, কিছুদিন হলো আমি ঢাকায় এসেছি। প্রথমে বনানী তারপর উত্তরার এই বিল্ডিংয়ে। তবে ছাদে আজ প্রথম। আমার নাম হাসি। দেশের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল। সদ্য বিধবা। দোতলার দক্ষিণে সিয়ামের আম্মু, আমরা উকিল আপা বলি, উনি আমার একটু দূরের আত্মীয় হলেও অনেক কাছের। আমাদের একই জায়গায় বাড়ি। আমি সবসময় হাসি। আমার মন ভালো অথচ আরো বেশি করে মন ভালো রাখতে আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। আরও কিছু জানবেন? সরি! না, আমি আসলে এতকিছু ভেবে বলিনি। হঠাৎ করে প্রথম কাউকে দেখলে এমনই হয়। তাও যদি সে মানুষটা বিকেলের এক চিলতে নির্জন খোলা ছাদে একাকী একজন নারী হয়। মনে হচ্ছে আপনি রাগ করেছেন। আরে না, এত অল্পতে রাগ-টাগ আমার মাথায় আসে না। আপনি তো প্রায়ই বিকেলে এখানে বসেন। হ্যাঁ, আপনি জানলেন কী করে? খুব সহজ! তিনতলার পিচ্চি রওজা, ফাইয়াজ যে বাচ্চা দুটোকে আপনি পড়ান ওরা উকিল আপার ছেলে সিয়ামের সাথে খেলে। রওজা, ফাইয়াজ বলেছে, আন্টি আমাদের বাসার নকীব স্যারের মাথায় গণ্ডগোল আছে। ছাদে একা একা নিজের সাথে কথা বলে। হা হা হা! হ্যাঁ, রওজা, ফাইয়াজ, সিয়াম ওরা একই স্কুলে পড়ে। রওজা, ফাইয়াজের বাবা আমার চাচাত ভাই। বাচ্চা দুটো বেশ দুষ্টু। একদম পড়তে চায় না। ছোট বাচ্চাদের পড়াতে যা ঝামেলা! আসলে ভালোও লাগে না। যে কাজটা করে ভালো লাগে না সেটা করেন কেন? এই যা! একটু বেশি বলে ফেললাম, নকীব ভাইয়া, আজ আসি কেমন। উকিল আপা রিং দিয়েছে, ডাকছে। নকীব মনে মনে বলছে, আচমকা ঝড়ের মতো মেয়েটা এসে পুরো পরিবেশটা কেমন থমথমে করে দিল। ক্ষণিকের পরিচয়ে অবলীলায় তোতা পাখির মতো এক নাগাড়ে কত কথা বলে গেল। যাই বলি মেয়েটার কথা বলার মধ্যে অদ্ভুত একটা সরলতা আছে। আর চেহারাটা সেই অ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়ানদের মতো। বিয়ের গন্ধ এখনও গায়ে লেগে আছে। মেয়েটা বিধবা! এত অল্পতে! খুব কষ্টের ব্যাপার! বিধবা হওয়ার কারণটা জানতে চাওয়া অভদ্রতার মধ্যে পড়ে। এরপর দেখা হলে বিধবার বিষয়টা জানতে চাইব না। নকীবের ভাবির শরীরটা ভালো না থাকায় আজ সকালে রওজা, ফাইয়াজের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার ভারটা তার ওপর বর্তালো। স্কুল ছুটি পর্যন্ত পাহারায় থাকতে হবে। নকীব ভাবছে, শহরের স্কুলগুলোর ওই একটা ফ্যাশন। বাচ্চাদের সাথে তাদের কাউকে না কাউকে ডিউটি দিতে হবে। আমরাও তো স্কুলে পড়েছি কোনোদিন বাবা-মা বা গার্জিয়ান টাইপের অন্য কেউ স্কুলের মুখ ফিরেও তাকায়নি। কখনও একাকী কখনও পাড়ার ছেলেদের সাথে দলবেঁধে হেঁটে গেছি। বেশ মনে আছে। তখন প্রথম স্কুলে ভর্তি হতে যাচ্ছি আমার সঙ্গে আমাদের বাসার লজিং মাস্টার বাসেত স্যারকে দেওয়া হলো। স্কুলের কেরানি স্যার জিজ্ঞেস করছে এই ছেলে নাম, বয়স বল। বাসেত স্যার আমার নামের আগে পিছে টাইটেল জুড়িয়ে দিয়ে কেরানি স্যারকে বলে দিল। আর কেরানি স্যার আমার বয়স নিজের আঙুলে কষে লিখে ফেলল। কোনো সার্টিফিকেটের বালাই নেই। অভিভাবক হিসেবে আমার সাথে বাসেত স্যারের সেই যাওয়াটাই শেষ। নকীবের ভাবনার শেষপ্রান্তে পিছন থেকে ডাক শুনতে পেলÑ নকীব ভাইয়া! আপনি? আমাকে আপনি বলার কী আছে? তুমি বললে কী খুব সমস্যা! আমার চেয়ে বয়সে আপনি বেশ বড়। আমাকে দেখে মুখ লুকালেন কেন? লুকিয়েছি! কই না তো? আমি খুব ভালো করে খেয়াল করেছি আপনি আমাকে দেখে লুকিয়েছেন। আপনার মাথায় গণ্ডগোল আছে জানি কিন্তু আপনি ভিতুর একটা ডিম সেটা এখন জানলাম। আপনার ভাবি তো ওদের সাথে আসে! ভাবির শরীরটা ভালো না। ফুচকা খাবেন? না, ফুচকা আমি খাই না। তাহলে সিগারেট? সব সময় খাই না। ওকে, আমি ফুচকা খাব, আপনি একটু দাঁড়িয়ে থাকেন। আজ ছাদে আসব। আপনার সাথে অনেক গল্প করব। মন ভালো করার গল্প। আমার মোবাইল নম্বরটা রাখেন। কাছের আত্মীয়স্বজন বলে আমার নাকি মাথায় গণ্ডগোল আছে। এখানে এসে আপনাকে পেলাম। আমাদের দুজনের মাথায় গণ্ডগোল আছে। ব্যাপারটা বেশ মজার তাই না। প্রেম করেছেন? মানে! মানে মানে করছেন কেন? মনে হয় আকাশ থেকে পড়লেন। ন্যাকামো, ভাবটা এমন যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেন না। একটা বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা ছেলে, প্রেম কথাটা মনে হচ্ছে এই প্রথম শুনলেন। না, করা হয়নি। করা হয়নি না করতে পারেননি? আপনার মতো ছেলেরা কখনও প্রেম করতে পারে না। প্রেম করতেও কোয়ালিটি লাগে। আমি গেলাম। আজকে আপনি ওদের নিয়ে একটু আসেন, কেমন। কোথাও ঝামেলা পাকাবেন না। উকিল আপার মাথা আমার চেয়ে চার গুণ হট! উল্টাপাল্টা হলে খবর আছে। গড়গড়... করে মেয়েটার মুখের কথাগুলো শুনে নকীব নিজেকে বলছে, কী সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা। এখন ক্লিয়ার। মেয়েটা কেন বিধবা হলো! নির্ঘাত ও ওর স্বামীকে মেরে ফেলেছে। কত সাহস! আমাকে সিগারেট খেতে বলে। প্রেমগিরি শেখায়। এরপর হয়তো বলবে আপনি বিকেলে ছাদে বসেন কেন? বাইরে ঘুরতে পারেন না। অনধিকারচর্চা! কেন যে এরকম একটা মেয়ের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেলাম। তবে এটা ঠিক আমি তো আসলে ওকে দেখে মুখটা লুকিয়েছিলাম। লুকাতে পারলাম কই। ধরা পড়ে গেলাম। বিকেলে হাসি ছাদে এলো না। তবে বাচ্চাগুলো এসেছে। ওরা খেলছে। নকীব ভাবছে, আচ্ছা একটা ফোন করলে হয় না। দরকার নেই। যা মুডি মেয়ে! তেলে বেগুনে-জ্বলে উঠে বলবে, আমি আসি না আসি আপনার কী? আজকের বিকেলটা নকীবের কেমন মনমরা লাগছে। কেন এরকম লাগছে! ধূসর আকাশে মেঘ জমাট বেঁধেছে। মনে হচ্ছে এখনই বৃষ্টি নামবে। আজকাল বৃষ্টির কোনো কাল নেই। ইচ্ছে হলেই কাঁদতে শুরু করে। রাতে নকীবের ভালো ঘুম হলো না। এপাশ-ওপাশ করে কাটিয়ে দিল। সাথে নকীবের মায়ের ফোনের কথাগুলোই তার মনে অনবরত বাজছে। বাবা, তুই কবে বাড়ি আসবি? তোর বাবার শরীরটা ভালো না। সবার চাকরি হয় তোর হয় না! কোথাও এক জায়গায় ঢোক। তারপর ভালো কিছু একটা চেষ্টা করবি। বয়স হয়েছে, আমরা চলে যাওয়ার আগে তোর বিয়েটা দেখে যেতে চাই রে বাবা। নকীব বলে মা, তোমার এতগুলো ছেলে মেয়ে সবার বিয়েশাদি হয়েছে। তোমরা নাতিপুতির মুখ দেখেছ আর কত? একটা ছেলের না হয় বিয়ে নাই হলো, সমস্যা কী? মা বলে, বোকা ছেলে বাবা হলে বুঝবি, ওটা আমাদের কর্তব্য। আমার বাবা হওয়ার দরকার নেই। আমি বিয়ে করব না মা। আমি এমনই থাকতে চাই। নকীবের মা মন খারাপ করে কল কেটে দেয়। বিকেলে নকীব ছাদে এসে দেখে হাসি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। মুখ থেকে কথা ফসকে গেল, তোমাদের বাড়িটা নান্দাইলের কোথায়? বিরাশি! বিরাশি! জাঙ্গালিয়া কালি মন্দিরটা তো ওখানেই। হ্যাঁ, আপনি গিয়েছেন? একবার গিয়েছিলাম। খুব সুন্দর! সবকিছু ছবির মতো! ২০০ বছরের পুরনো একটা মন্দির। কালী মন্দির ঘিরে বিশাল বটগাছ। দক্ষিণ দিকে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা। নদের ওপারে গফরগাঁও চর। হাসি বলল, আমি এত ইতিহাস জানি না। প্রতিবছর ওখানে শ্যামাপূজার বিরাট মেলা বসে, দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন আসে, সেটা দেখেছি। আপনি কবে গেলেন? একবার গিয়েছি। তাও পাঁচ বছর আগে। মন্দিরটা আসলে কি ছিল জানো তো? বলেছি তো জানি না আর তেমন জানার ইচ্ছে কখনও হয়নি। তবে বটগাছটার পাতা তিন রকমের তা জানি। এই তো ঠিক বলেছ। ওই মন্দিরটা আগে বৃটিশদের নীল কুঠির ছিল। নীল বিদ্রোহ শুরু হলে ইংরেজরা এলাকা ছেড়ে ভেগে যায়। পরে গাঙ্গাটিয়া হিন্দু জমিদার তাঁর স্বপ্নপূরণে ওই কুটিরে মন্দির নির্মাণ করে অত্র এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন। কথার মাঝখানে তড়িঘড়ি করে হাসি চলে গেল। মেয়েটা জানি কেমন! কখনও গরম কখনও নরম। আজ কত ঠাণ্ডা ভাষায় কথা বলল। একটা অজানা উত্তেজনা সারারাত নকীবের চোখের পাতায় ঘিরে রেখেছিল। কখনও নিজের অজান্তে মন কথা বলে উঠেছিল, নকীব তুই কোন পথে হাঁটছিস! একবার কি ভেবে দেখেছিস? যে উদ্দেশ্য নিয়ে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে বিভূঁইয়ে পড়ে আছিস তা থেকে ক্রমশ কি তুই সরে যাচ্ছিস না! সকাল সকাল বিছানা থেকে উঠে নকীব এক কাপ লাল চায়ে গলাটা ভিজাল। তারপর খবরের পাতায় চোখ বুলাতেই তার নয়টা বেজে গেল। পুরো বিল্ডিং থেকে রোজগারি মানুষ, স্কুলগামী বাচ্চাদের পদচারণা দ্রুত হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার মৃদু শব্দ তার কানে ভেসে এলো। সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে গোটা এলাকাটার সুনসান নীরবতা থেকে থেকে ভেঙে যাচ্ছে বাইরে থেকে হকারের লম্বা হাঁকডাক কোলাহলে। পেপারে একটা চাকরির সার্কুলার নকীবের চোখে পড়ল। সমস্যা ওই ব্যাংক ড্রাফটের টাকার। এরমধ্যেও ছয় সাত জায়গায় সে দরখাস্ত করেছে। নকীব দুটো টিউশনি পড়ায়, তাও মাস শেষ হওয়ার এখনো অনেক বাকি। হাতে তেমন তার টাকা-পয়সা নেই। বাড়ি থেকে আর টাকা নিতে নকীবের ভালো লাগে না। এতগুলো বছর পড়ার খরচ তারা চালিয়েছে। আর কত! আজ বিকেলে তেমন কেউ ছাদে এলো না। ক্লান্ত সূর্যের আরক্তিম আলো হারিয়ে যাওয়ার তালে অনেক কথা নকীবের মনে পড়ছে। জীবন সংগ্রামের বাধ্যবাধকতায় চারদিকে কত কিছু নিয়ে তার মতো নকীবরা একটার পর একটা দিন পার করছে। নিজেকে এভাবে মহতি চৈতন্যের খোলসে আটকিয়ে রাখা মহাপুরুষদের কাজ। তার মতো ছাপোষা একজন মানুষের পক্ষে কী করে সম্ভব! চাকরির ধান্দা, টিউশনির চিন্তা মাথার চারপাশে গিজগিজ করে। বয়স বেড়ে যাচ্ছে। একটা কাজ ম্যানেজ করার এখনো মুরোদ হলো না। কাছের বন্ধুরা চাকরি-বাকরি বিয়ে-শাদি সব কত দ্রুত বাগিয়ে নিল। কত ধরনের দায়-দায়িত্ব ওদের কাঁধে! আর নকীবের বেলায় সব ফাঁকা, শূন্যতা! চারদিকে এত শূন্যতা নিয়ে নিজেকে কিভাবে ঠিক রাখা যায়। সূর্য ডুবছে। ঘরছাড়া পাখিরা ঘরে ফিরছে। এক ধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে সে আছে। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে হাসি এসে বলছে, নকীব ভাইয়া, একটা খারাপ সংবাদ আছে। বাড়ি যাচ্ছি। আমার বাবা স্ট্রোক করে ময়মনসিংহ মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে। সহজে হয়তো আর ফেরা হবে না। আপনার সাথে অনেক বেয়াদবি করেছি। পারলে ক্ষমা করবেন। আমি গতকাল ছাদে এসে পিছন থেকে আপনার কথা শুনেছি। আপনি একা একা বলে যাচ্ছেন। পড়ালেখা জানা একটা বেকার ছেলের প্রলাপ আমাকে কষ্ট দিয়েছে। কারো কাছে চাইতেও পারছেন না অথচ টাকার অভাবে আপনি চাকরির দরখাস্ত করতে পারছেন না। বিকেলে ছাদে বসে সময় কাটান শুধু বাইরে বেরুনের খরচের ভয়ে। একটা সিগারেট ভেঙে খান। প্রতিযোগিতায় বন্ধুরা আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে আর আপনি চাঁদ তারা সূর্য গুনে দিন পার করছেন। এবার লজ্জা ছুড়ে ফেলুন। এই প্যাকেটটা রাখুন। এখানে কিছু টাকা আছে। এটা আমার একান্ত নিজের। আপনি চাকরি পেলে সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিবেন। এবার আসি। ভালো থাকবেন। নকীব বলল, হাসিÑ হাসি, শোনো শোনো। ভিতর বাইরের অনেক না উপেক্ষা করে হাসির টাকাগুলো নিজের করে নিতে নকীবের ইচ্ছে হলো। হোক সেটা কারো কৃপা এই মুহূর্তে তার যে এগুলো খুব প্রয়োজন। উড়ে চলা মেঘের ভেলা, পাখি, ফুল সবার মধ্যে এক ধরনের মন খারাপের বার্তা দেখা যাচ্ছে। হাসি যাওয়ার আজ নয় দিন হলো। এই নয় দিনে ওর কোনো খোঁজখবর পাওয়া গেল না। কেমন আছে মেয়েটা! কেমন আছে ওর বাবা! কতবার চেষ্টা করেও ওর ফোনটা খোলা পাওয়া গেল না। নকীব ভাবছে, একবার নান্দাইলে গেলে কেমন হয়? বিকেলের ছাদটা হঠাৎ কেমন জানি বিবর্ণতায় ছেয়ে গেছে। চারপাশ বেদনার সুর বাজছে! নকীবের মনের বাড়ির আহাজারি ওরা হয়তো শুনতে পেরেছে। হাসি চলে যাওয়ার এই ক দিনে কতবার চেষ্টা করেও কোনও কিছু জানা গেল না। নকীব মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবার হাসির নম্বরে রিং দিল, যদি খোলা পাওয়া যায়? আরে রিং তো বাজছে। কেউ ধরছে না কেন! আসসালামু আলাইকুম, কাকে চান? ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমি ঢাকা থেকে বলছি, হাসি নেই? হাসি বুবু! বাড়িতে নাই, মামার বাড়ি গেছে। আপনি কে? তুমি মনে হয় হাসির ভাই? জি! আপনি? তুমি আমাকে চিনবে না। তোমার বাবা কেমন আছে? এখন ভালো। কাল ময়মনসিংহ থেকে এসেছে। ডাক্তার বলেছেন এই যাত্রা রক্ষা, তবে খেয়াল রাখতে হবে, বিপদ পুরোপুরি কাটে নাই। আপনি কে বললেন না যে? আমি! তোমার হাসি বুবু ঢাকায় যেখানে ছিল আমি সেখানেই থাকি। ও বেবী আপার বাসা! হ্যাঁ! ঠিক আছে বুঝতে পারছি। বুবু এখনি আসবে। এলে আপনার কথা বলব। আপনার নাম? আমার নাম নকীব। তোমার নাম কী? আল আমিন। আল আমিন তুমি মাদরাসায় পড়ো, তাই না? জি, আপনি দেখছি সব জানেন। আচ্ছা আল আমিন তোমাদের বাড়িতে আসতে হলে আমাকে তো নান্দাইলের বিরাশিতে নামতে হবে, তাই তো? জি, আপনি বিরাশি এসে কছিমুদ্দিন মাস্টারের নাম বললে যে কেউ দেখিয়ে দিবে। মাস্টারের বাড়ির দুটা বাড়ির পর আমাদের বাড়ি। হাসি-খুশি একটা বড় নার্সারিওয়ালা বাড়ি। লোকে বলে, হাসি-খুশি নার্সারি বাড়ি। কবে আসবেন নকীব ভাইয়া? দেখি আসব একদিন। ভালো থেকো কেমন। নান্দাইল যাওয়ার চিন্তাভাবনা চূড়ান্ত করে নকীব বাসের অপেক্ষায় উত্তরার জলসিঁড়ি কাউন্টারে বসে আছে। সড়কপথে নান্দাইল যাওয়ার জন্য জলসিঁড়ি বাসটাই উত্তম। এটা সে আগের দিন কাউন্টারে এসে জেনে গেছে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সকাল আটটার জলসিঁড়ি ছাড়ে, জ্যাম না থাকলে উত্তরায় এক ঘণ্টায় চলে আসে। নকীব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল নয়টা বাজতে এখনও দশ মিনিটি বাকি। তার মানে আর দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে বাস চলে আসবে। বাসে উঠে বাম দিকের মাঝখানের খালি সিটে নকীব বসে পড়ল। ইচ্ছে ছিল জানালার পাশে বসার কিন্তু আগেই তার সমবয়সী একজন সেটা দখলে নিয়ে হা করে ঘুমাচ্ছে। নকীব বন্ধ জানালার গ্লাসটা হাত দিয়ে সরাতেই লোকটা জেগে উঠল। কোথায় এটা? উত্তরা। আপনি কই যাইবেন? নান্দাইলে। ঘুরতে যাচ্ছেন? না, একজন অসুস্থ মানুষকে দেখতে। আমার বাড়ি নান্দাইলে। ভালোই হলো, দুই ভাই গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে। কী করেন? কিছু না। তার মানে বেকার! খুব ভালো, বেকার থাকার মতো সুখ পৃথিবীতে আর নাই। কাউকে ট্যাক্স দেওয়া লাগে না। স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করা যায়। চাকরির চেষ্টা করছেন কিন্তু পাচ্ছেন না, তাই না? মামু খালু না থাকলে চাকরি পাওয়া যায় না, বুঝলেন। হা হা হা সেদিক দিয়া আমি ঠিক আছি। বাপের টাকা নষ্ট করে বেশি পড়ালেখা করি নাই। খারাপ কি ভালোই তো চলছে দিনকাল। ফকিরাপুল পীরের দরবারে থাকি। পীরের খেদমত করি আর কি! পড়ালেখা কতদূর করছেন? মাস্টার্স করেছি। ও! এজন্যই তো চাকরি হয় না। এত লেখাপড়া আপনাকে কে করতে বলছে! শুনেন আমার পীর সাহেব আপনার মতো বড় পাস দিছে কিন্তু লাভ হয় নাই। বাপ-দাদা কিশোরগঞ্জের পীর ছিল। দেশ-বিদেশ ঘুরে পরে বাপ-দাদার সাইনবোর্ডে ঢাকায় বইসা পড়ল। মাশাআল্লাহ চেহারা-সুরুত ভালো। পীর হিসেবে খাপে খাপ। এখন মুরিদের অভাব নাই। এক মুরিদ তো একটা ফ্ল্যাট এমনিতে দিয়ে দিছে। দুই হাতে কামাইতেছে। এই যে এখন মুরিদের ডাকে তিন দিনের সফরে কলকাতা গেছেন। লোকটার একপেশে কথাবার্তায় নকীবের কান তালা লাগার উপক্রম। চেনা নাই জানা নাই তখন থেকে হুটহাট বকবক করেই যাচ্ছে! অসহ্য! কানে তুলা দিলে ভালো হতো। এখন মোবাইলে আবার প্যাঁচাল শুরু করেছে। হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম, বলেন! পীর সাহেব ইন্ডিয়ায়, সোমবার আহেন। কথার আর আওয়াজ আসছে না দেখে নকীব মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে লোকটা আবার হা করে ঘুমাচ্ছে। যাক বাবা বাঁচা গেল! ইস! নাক ডাকা শুরু করেছে। কিছুদূর যাওয়ার পর বাস থেমেছে। টঙ্গী কাউন্টারে লোক তুলছে। কন্ডাক্টর বলছে, সামনে আর একটা কাউন্টার আছে, এরপর আর কোথাও গাড়ি থামবে না, গড়গড়ে চলবে। বৃহস্পতিবার একটু প্যাসেঞ্জারের চাপ থাকে। হা হা হা... দ্যাখেন তো ভাই আমি কত আহাম্মক, এতক্ষণ ধরে কথা বলছি অথচ আপনার নামটা জানা হলো না! আমার নাম নকীব। নকীব ভাই আমি অধম ইদ্রিস আলী। ঢাকায় থাকেন তো? হ্যাঁ, উত্তরায় এক আত্মীয়ের বাসায় থাকি। নান্দাইলে কে আছে? ঠিক নান্দাইলে না, ওখান থেকে একটু দূরে বিরাশিতে আমার এক খালু থাকে। ওনাকেই দেখতে যাচ্ছি। বিরাশি! অসুবিধা নাই নান্দাইলে নাইমা অটো সিএনজিতে চইলা যাইবেন। খুব বেশি ত্রিশ চল্লিশ মিনিট লাগবে। চিন্তা করেন না আমি ব্যবস্থা করে দিমু নে। কী হইছে খালুর? স্ট্রোক করেছে। ময়মনসিংহ হসপিটালে ছিল, এখন একটু ভালো, বাড়িতে আছে। আহা রে! কদিন তো থাকবেন? না, আজই ফিরব। কী কন? আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছেন, যতই অসুস্থ মানুষকে দেখতে যান, পিঠা-পায়েস না খাওয়ায় কুটুমরে ছাড়ার রেওয়াজ আমাদের এখানে নাই। এখন লোকটার কথা নকীবের ভালোই লাগছে। মনে হচ্ছে লোকটা সাদাসিধা সহজ সরল। মানুষকে খুব সহজে আপন ভেবে অকপটে সব কথা বলে ফেলে। ইদ্রিস ভাই কতক্ষণ লাগতে পারে? বেশিক্ষণ লাগবে না; সকাল সকাল যাচ্ছি তো, কাপাসিয়া পার হলে আর তেমন জ্যাম থাকবে না। ইনশাআল্লাহ তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যাব। হা হা হা... দুদিন থাকব। বুঝেন না ঘরে নয়া বউ ছাইড়া থাকতে কার মন চায়! নকীব ভাই আপনি এক কাজ করেন। ফেরার পথে আমাদের বাড়িতে আসেন। দুদিন থেকে দুই ভাই একসাথে ঢাকায় ফিরব। ও আর একটা কথা, ফকিরাপুলে পীর সাহেবের দরবারে অবশ্যই আসবেন। পীর সাহেবের সাথে পরিচয় করায় দিব। ওনার হাত কিন্তু অনেক লম্বা। মন্ত্রী মিনিস্টার আমলা কামলা সবাই ওনার ওখানে আসে। তদবির করলে চাকরি হয়ে যেতে পারে। আরে আবার কে ফোন করল! মোবাইলের জ্বালায় আর ভালো লাগে না। ও! বউ রিং দিছে। হ্যালো, জান বলো। এই তো কাপাসিয়ার কাছাকাছি, আইসা পড়ব চিন্তা করো না। বউ কল করেছে। হা হা হা একটা কথা মনে পড়ে হাসি লাগছে। সেদিন এক মহিলা আসছে তার স্বামী নাকি পরকীয়া করে। এখন স্বামীকে ওই মহিলার হাত থেকে ছাড়ায় আনতে হবে। বলেন তো এইটা পীরের কাজ! জানেন না কি সমস্ত কাজ কারবার নিয়ে মানুষ পীরের কাছে ধরনা দেয়। মনে হয় পীরের কাছে আলাউদ্দিনের চেরাগ আছে। ইদ্রিস ভাই গাড়ির স্টার্ট কি বন্ধ হলো? তাই তো দেখছি! ড্রাইভারের মনে হয় ছোট কাজে চাপ দিছে। চালু করে নামেন আমরাও মাইনাস করে চা পানি খাই। সিগারেট খান তো? মাঝেমধ্যে খাই। লজ্জা কিসের! ধরেন। অল্প সময়েই একটা মানুষ কত কাছের হতে পারে ইদ্রিস ভাই তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। মনে হচ্ছে কতদিনের জানাশোনা। শরতের উড়ে চলা সাদা মেঘের পাল্লায় নান্দাইলের পথে বাস আবার ছুটছে ইদ্রিস আলী সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। নকীব এপাশ-ওপাশ তাকাচ্ছে আর ভাবছে, এভাবে হঠাৎ করে অজানা একটা পরিবারে যাচ্ছি! জানি না তারা কি মনে করে! বাসটা এখন জোরেই চলছে। পাকুন্দিয়া পার হয়েছে, সাইনবোর্ডে হোসেনপুর লেখা দেখা যাচ্ছে। সামনে কি যেন একটা জটলা। গাড়ি থেমে গেছে। কেউ একজন বলছে, বাকচান্দা আসছে, গাড়ি আর যাবে না। চেঁচামেচিতে ইদ্রিস আলী চমকে উঠে বলছে, কী হইছে, গাড়ি ক্যান যাবে না? এবার হেল্পার বলছে, নামেন সবাই, নামেন। বাস মালিক সমিতির গ্যাঞ্জাম লাগছে, গাড়ি যাবে না। ইদ্রিস আলী নিচে নেমে খোঁজ নিয়ে এসে বলে, নকীব ভাই, চলেন বসে থেকে লাভ নেই। আসলে গাড়ি আর যাবে না। সিএনজিতে যেতে হবে। সমস্যা নেই, আমরা প্রায় এসে গেছিÑ দশ, পনেরো মিনিট লাগবে। নান্দাইল চৌরাস্তা মোড়ে আসতেই প্রায় একটা বেজে গেল। ইদ্রিস আলী বিরাশি যাওয়ার অটোরিকশায় নকীবকে বসিয়ে দিয়ে নিজের গন্তব্যে ফিরে গেল। যাওয়ার সময় দুজন দুজনার মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান হলো। বিরাশি দেশের আট দশটা গ্রামের মতো সবুজের সমারোহে ভরপুর। ইটপাথরের খাঁচায় বসে কতদিন নকীবের এত বড় খোলা আকাশ দেখা হয়নি। যেদিকে তাকায় চোখ মন জুড়িয়ে যায়। বিরাশি অটো স্ট্যান্ডে নেমে নকীব হাসির মোবাইলে রিং দেয়। মোবাইলের ওপ্রান্ত থেকে যে কণ্ঠ ভেসে আসে সেটা হাসির নয়। আসসালামু আলাইকুম, খুশি বলছি, আপনি নকীব ভাই বলছেন? আল আমিন বলেছে, আপনি আসছেন। এখন কোথায়? ও! আমাদের বাড়ির সামনে! আচ্ছা আচ্ছা, একটু দাঁড়ান, আসতেছি। নকীব হাসিখুশি নার্সারির সামনে দাঁড়িয়ে নানান জাতের ফুল ফলের গাছ ঘিরে বর্ণিল প্রজাপতির উড়ে চলা এক মনে দেখছে। খুশি তার ভাই আল আমিনকে নিয়ে নকীবের সামনে এসে সালাম দেয়। নকীব ভাই আমি খুশি আর ও আমার ছোট ভাই আল আমিন। খুশিকে দেখে নকীব অবাক হয়। এ যেন হাসির ডুপ্লিকেট। দুজনের চেহারার এত মিল! ভিতরে চলেন ভাই। আব্বা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। খালু এখন কেমন আছে খুশি? একটু আরাম হইছে। আল আমিন বলে, ভাইয়া, হাসি বুবু মোবাইলটা ছেড়ে যাওয়ায় খুব সমস্যা হয়েছে। তোমাদের হাসি বুবু কবে আসবে? খুশি বলে, আজ তো আসার কথা ছিল। কোনো ঝামেলা হলো কি না, রিং দিয়ে জেনে নিব এখন। নার্সারির পিছনেই হাসিদের বাড়ি। এক দেড় বিঘা বিশাল জায়গা নিয়ে এল প্যাটার্নের মতো বাড়িটা। চারপাশে গিজগিজ করছে নার্সারির গাছপালা। ফুলে ফলে একদম ছবির মতো লাগছে। মূল ফটক দিয়ে বাড়িতে ঢুকেই নকীবকে ওরা তাদের অসুস্থ বাবার কাছে নিয়ে গেল। আসসালামু আলাইকুম খালু! ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা, বাড়ি চিনতে সমস্যা হয়নি তো? না, ঠিকমতোই এসেছি। ওদের মুখে তোমার কথা শুনেছি। হাসিমা আজ তো আসার কথা। যাও বাবা তুমি অনেকদূর থেকে জার্নি করে আসছ, হাত মুখ ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া করে নাও। ভালোমন্দ পরে আলাপ করা যাবে। অসুবিধা নেই খালু, আপনি শুয়ে থাকুন। আমি একটু আপনার পাশে বসি। ময়মনসিংহ থেকে হাসি রিং দিয়ে জানিয়েছে কাল সকালে আসছে। অনেক জেদাজেদির পর নকীব সিদ্ধান্ত নেয় আজ রাতটা বিরাশিতে কাটিয়ে দিবে। তাছাড়া হাসি যেহেতু কাল সকালে আসছে এতদূর এসে ওর সাথে দেখা না হলে কেমন হয়! হাসিদের বাড়ির সকলই এত চমৎকার, আন্তরিক, মনেই হচ্ছে না নকীব কোনো অপরিচিতজনের বাড়িতে এসেছে। নিজের বাড়ির মতো লাগছে। হাসির আম্মার মাঝে নিজের মায়ের মুখটা ভেসে উঠেছে। বিকালে খুশি, আল আমিন, ওদের এক কাজিন মিল্লাতসহ মেহমান নকীব ভাইকে ঐতিহাসিক জাঙ্গালিয়া কালী মন্দির দেখাতে নিয়ে গেল। যদিও নকীব এর আগে একবার এখানে এসেছিল কিন্তু এখন সে দেখায় অনেক পরিবর্তন খুঁজে পেল। খুশি বলছে, নকীব ভাই এই জায়গাটাকে আমরা ভূতের বাড়ি বলি। দিনের বেলায় কেউ আসি না। গা ছমছম করে। দেওয়ানগঞ্জ বাজারটা দেখলেন না, শনি মঙ্গলবার ওখানে হাট বসে। হাটের দিন হাটুরেরা হাট শেষে এদিক দিয়ে বাড়ি ফিরলেই বিপদ। পথের মাঝে অশরীরী আত্মা হাঁটা-চলা করে, নানারকম ভয় দেখায়। আমি আসতাম না। আপনি আসতে চাইলেন দেখে এলাম। খুশি, এগুলো মিথ্যে কথা। ভূত বলে কিছু নেই, এগুলো মানুষের বানানো রটনা। নকীব ভাই আপনি বেশি পড়ালেখা করেছেন, ঢাকা শহরে থাকেন, তাই হয়তো এগুলো বিশ্বাস হচ্ছে না। ক দিন এখানে থাকেন টের পাবেন। আল আমিন বটগাছের ভিতর সিন্দুক, পরিত্যক্ত ইমারতের ভগ্নাংশের দিকে ঝুঁঁকে পড়ে দেখছে। হাতের ইশারায় ও নকীবকে ডেকে বলছে, ভাইয়া সিন্দুকটা বটগাছের ভিতর ঢুকল কিভাবে? বটগাছটা যখন একেবারে ছোট তখন থেকেই সিন্দুকটা ওখানে ছিল। তারপর বটগাছটার দিনে দিনে বেড়ে উঠল, শাখাপ্রশাখা বাড়ল আর সিন্দুকটা আগের জায়গায় থেকে গেল। তাই দেখে মনে হচ্ছে বটগাছের ভিতর সিন্দুকটা ঢুকে গেছে। ও তাই! ভাঙা বিল্ডিংটা একসময় তিনতলা ছিল। ওই যে দক্ষিণ পাশে ব্রহ্মপুত্র নদ দেখছ, একসময় ইংরেজরা এই পানি পথে কলকাতা থেকে এখানে এসে গরিব নিরীহ কৃষকদের ওপর নীল চাষের জুলুম অত্যাচার নিপীড়ন চালাত। বিদ্রোহ প্রতিবাদে একপর্যায়ে ওদের চরম দুঃশাসনের অবসান হয়। পরে তো লেজ গুটিয়ে এখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এরপর এই জায়গাটা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। খুশি এতক্ষণ মগ্ন হয়ে নকীবের কথাগুলো শুনছিল। হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখে ওদের পাড়ার বিপ্লব ভাই সামনে এগিয়ে আসছে। নকীবের কানের কাছে মুখ নিয়ে খুশি ফিসফিস করে বলছে, ভাইয়া ওনার মাথায় সমস্যা আছে, বেশি কথা বলবেন না। নকীবের দিকে হাত বাড়িয়ে বিপ্লব বলছে, হ্যালো কমরেড একটু আগুন হবে? নকীব পকেট থেকে ম্যাচ বের করে বিপ্লবের সামনে ধরে। বিপ্লব সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়াতে উড়াতে বলে, আচ্ছা কমরেড পেরেস্ত্রোইকা শব্দের অর্থটা জানি কী? ও হ্যাঁ! মনে পড়েছে, পুনর্গঠন। সেই সংস্কার কি আদৌ হয়েছে? আপনি কোথা থেকে এসেছেন? খুশি সামনে এসে বলে, বিপ্লব ভাইয়া উনি আমাদের গেস্ট, ঢাকা থেকে এসেছেন।