ফুটবল খেলা, দাঁড়িয়াবান্ধা খেলা, বটগাছের উপরে খেলা, এসব ভালো লাগলেও ক্রিকেট খেলা বসুর ভালো লাগে না। সে এই খেলা বুঝে না। যেদিন টিভিতে এই খেলা দেখায়, সেদিন আরও বিরক্ত লাগে। সারা দিন ধরে চলে এই খেলা, অন্যান্য অনুষ্ঠান বন্ধ করে খেলা দেখায়। মনে হতো কখন যে খেলা শেষ হবে। তবে দেখা যেত এই খেলা শুরু হলে সারাদিন ধরে চলে। শেষ হতে চায় না। তার পছন্দের অনুষ্ঠান দেখতে পারে না। মনে মনে গালি দেয় আর বলে কেন টিভিতে দেখাতে হবে এই খেলা। পাশের গ্রামে তার বন্ধুরা ক্রিকেট খেলা শুরু করেছে। স্কুলে যখন ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে বলে তখন তার রাগ হয়। আবার লজ্জাও লাগে যে, সে এই খেলা সম্পর্কে কিছুই জানে না। বসুর ছোট মামা হঠাৎ বেড়াতে আসে তাদের বাড়িতে। সে শহরে থেকে পড়াশোনা করে। ক্রিকেট খেলার খুব ভক্ত। বসু মনে মনে ভাবে এটাই সুযোগ মামার কাছে ক্রিকেট খেলা ভালো করে বুঝে নিতে হবে। তার মামাই প্রথম শিখিয়ে দেয়, কীভাবে ক্রিকেট খেলতে হয়। তার মামা বলে, দুইজন ব্যাটসম্যান থাকে। এরা এক দলের। আর বাকিরা অন্য দলের। এদের মধ্যে আবার একজন বল করবে আর ব্যাটসম্যান সেই বল মারবে। যদি বাউন্ডারি পার হয় তাহলে চার। আর যদি উপর দিয়ে বাউন্ডারি পার হয় তাহলে ছয়। যদি উপর দিয়ে মারে কিন্তু বাউন্ডারি পার না হয়, কেউ ধরে ফেলে তাহলে আউট। রান কীভাবে হয় এটাও শিখে নেয়। কিছু নিয়মকানুন শিখেই শুরু হয় ক্রিকেট খেলা। কাঠ দিয়ে ব্যাট নিজেরাই তৈরি করে। কঞ্চি দিয়ে স্ট্যাম্প বানানো হয়। তাদের গ্রামে যেখানে দুর্গাপূজা হয়, সেই মণ্ডপের সামনে একটি ছোট মাঠ আছে সেখানেই শুরু হয় ক্রিকেট খেলা। কখনও পড়ে থাকা জমিতে চলে খেলা। বল কীভাবে করতে হয় তারা টিভিতে দেখেছে। কিন্তু কেউ বল করতে পারে না। ঢিল ছোড়ার মতো করে বল করে। হাত ঘুরিয়ে বল করতে চাইলে বল সোজা যায় না। আর এক দিকে চলে যায়। এভাবেই চেষ্টা করতে থাকে। প্রথম দিন এভাবে খেলে পরের দিন সারা শরীর ব্যথা করে। হাত ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারে না। বুঝতে পারে গতকাল হঠাৎ করে খেলার জন্য এমন ব্যথা হচ্ছে। স্কুলে বসুর এক বন্ধু তাকে জড়িয়ে ধরলে, সে বলে এই আস্তে আমার সারা শরীর ব্যথা। পেটের চামড়াসহ ব্যথা করছে। স্কুল থেকে এসে খাওয়া করে আবার শুরু হয় খেলা। আজ আর বেশি দৌড়াদৌড়ি করতে পারে না। বলও করতে পারে না ব্যথার কারণে। বসু নির্দেশের সুরে বলে, এভাবেই খেলতে হবে। আস্তে আস্তে ব্যথা কমে যাবে। যদি না খেলি তাহলে ব্যথা থেকে যাবে। অবশ্য কাল যদি একটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়া যেত, তাহলে এত ব্যথা হতো না । আজ আর খেলা জমে না। সবার শরীরে ব্যথা। এভাবেই আস্তে আস্তে করে খেলে আজকের মতো খেলা শেষ করে। বসু আজ তার বড় ভাইয়ের সাথে বীরগঞ্জ শহরে এসেছে কিছু কেনাকাটা করার জন্য। কেনাকাটা করে তার বড় ভাই বলে, তার কলেজে একটু কাজ আছে। দুজনেই কলেজে চলে আসে। বসুকে বাইরে দাঁড় করিয়ে সে যায় কলেজের ভিতরে। সে সময় কলেজের মাঠে ক্রিকেট খেলা চলছে। বসু দাঁড়িয়ে খেলা দেখা শুরু করে, সে খুব মন দিয়ে খেলা দেখে। তারা কীভাবে এত স্পিডে বল করছে আবার ব্যাটসম্যান চার ছয় মারছে। কীভাবে নিজেদের মধ্যে জায়গা বদল করে রান নিচ্ছে। সবই খুব মনোযোগের সাথে খেয়াল করে। কীভাবে বল ওয়াইড হচ্ছে আম্পায়ার ওয়াইড বলের সংকেত দিচ্ছে। কীভাবে নো বল হচ্ছে আম্পায়ার নো বলের সংকেত দিচ্ছে। চার হলে আম্পায়ার একরকম সংকেত দিচ্ছে আবার ছয় হলে আর এক রকম সংকেত দিচ্ছে। এর মধ্যে একজন রান আউট হয়ে গেল। বসুর মতো তার পাশে দাঁড়িয়ে আর একজন খেলা দেখছিল। বসু তাকে জিজ্ঞাসা করে এটা কীভাবে আউট হলো। লোকটি বসুর কথা শুনে বুঝতে পারে যে, দাঁড়িয়ে খেলা দেখলেও ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান নেই তার। তাই ক্রিকেট খেলার নিয়মকানুন ভালো করে বোঝাতে থাকে। লোকটি বলে, এটাকে রান আউট বলে। দুই পাশে যে তিনটি করে স্ট্যাম্প আছে সেই স্ট্যাম্পের একটু দূর দিয়ে দুই পাশেই দাগ দেয়া আছে। লোকটি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দাগ যাতে স্পষ্ট বোঝা যায়, সে জন্য দাগের উপর দিয়ে চুন দেয়া আছে। দূর থেকেই তা বোঝা যাচ্ছিল। লোকটি আরও বলে, যখন ব্যাটসম্যান বল মারে, তখন যদি বল দূরে চলে যায় আর ব্যাটসম্যান মনে করে যে রান নেয়া যাবে, তখন তারা নিজেদের মধ্যে জায়গা পরিবর্তন করে। মানে এই পাশেরজন ওইপাশে চলে যায় আর ওই পাশের জন এই পাশে চলে আসে। তখন এক রান হয়। আর রান নেয়ার সময় যদি ব্যাটসম্যান দাগ পার হওয়ার আগেই কেউ বল দিয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত করতে পারে, তাহলে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাবে। যে পাশের স্ট্যাম্পে আঘাত করবে সেই পাশের ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাবে। যেমন এই পাশের ব্যাটসম্যান কিন্তু পৌঁছাতে পারেনি। তার আগেই স্ট্যাম্পে বল দিয়ে আঘাত করে স্ট্যাম্পের বেল্ট ফেলে দিয়েছে। এজন্য আউট হয়ে গেছে। শুধু স্ট্যাম্পে আঘাত করলেই হবে না। স্ট্যাম্পের বেল্ট যেন নিচে পড়ে যায়। বেল্ট না পড়লে কিন্তু আউট হবে না। আর স্ট্যাম্পের পিছনে যে দাঁড়িয়ে আছে তাকে আম্পায়ার বলে। মানে ফুটবলে যাকে রেফারি বলে, ক্রিকেটে তাকে আম্পায়ার বলে। সে যে হাত একেক সময় একেক রকম করছে এটা কী? এটা আসলে একেকটার একেক সংকেত। যেমন আউট হলে ডান হাত উপরে উঠিয়ে তর্জনী দেখালে বুঝতে হবে আউট। যদি ছয় হয় তাহলে দুই হাত উঁচু করে দেখাবে। চার হলে, ডান হাত, ডানে বামে নাড়াচাড়া করে করে দেখিয়ে দিবে। যদি ওয়াইড হয় তাহলে দুই হাত প্রসারিত করবে। নো বল হলে শুধু ডান হাত প্রসারিত করবে। আরও অনেক নিয়ম আছে। বসু আরও অনেক সময় ধরে খেলা দেখে আর লোকটি যা বলে তার কথার সাথে মিলিয়ে নেয়। দেখল লোকটি যে ভাবে বলেছে সেই ভাবেই আম্পায়ার সংকেত দিচ্ছে। বসু মনে মনে খুব খুশি হয় আজ অনেক কিছু শেখা হলো। তাছাড়া তার মামার কাছে কিছু শিখেছিল, সেগুলোও লোকটির কথার সাথে মিলিয়ে নেয় ঠিক আছে কিনা। মনে মনে বলে লোকটি যে বলল, আরও অনেক নিয়ম আছে। থাক গে, আজ যা শিখেছি এই দিয়েই খেলা যাবে। এর মাঝে আর একজন আউট হয়ে গেল। বসু বলে, এটা কীভাবে আউট হলো। বল ব্যাটে লেগে কিপারের হাতে গেছে। মানে কিপার ধরে ফেলেছে তাই আউট হয়ে গেছে। এভাবেও আউট হয়? কেন হবে না? বল ব্যাটে লাগলে মাটিতে পড়ার আগে, কেউ যদি ধরে ফেলে তাহলে আউট। ব্যাটসম্যানের পিছনে যে বলটি ধরল তাকে কী বলে? তাকে উইকেট কিপার বলে। যেহেতু উইকেট কিপার বল ধরেছে সেজন্য এটাকে কট বিহাইন্ড বলে। আর যদি যে বল করে, সে ধরে ফেলে তাহলে কট এন্ড বল বলে। বসুর আজ মোটামুটি অনেক কিছু শেখা হয়ে যায়। তবে সবকিছু মনে থাকে না। আজ বিকালবেলা খেলতে এসে, সে সবাইকে বুঝিয়ে দেয় খেলা। সবাই আগ্রহের সাথে তার কথা শুনে। আজ বিকালে ভালোই খেলা জমে ওঠে। তবুও শহরের ছেলেরা যেভাবে বল করেছে বসু সেই ভাবে বল করতে পারে না। অনেক চেষ্টা করেও, সেই রকম বল করতে পারছে না। বসু ডানে বামে মাথা ঘুরিয়ে বলে, ওরা যে স্পিডে বল করে আমাদের কারও সেই রকম হচ্ছে না। ঝন্টু বলে, ওরা অনেক দিন ধরে খেলছে, ওরা তো পারবেই। আমরা তো আর বেশিদিন ধরে খেলছি না, যে ওদের মতো করে হবে। তবে অতদিন ধরে খেললে আমাদেরও হবে। কালু বলে, আমাদের তৈরি করা ব্যাট দিয়ে খেলা ভালো হচ্ছে না। যদি কেনা ব্যাট হতো, তাহলে খেলা আরও ভালো হতো। বসু কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, ব্যাটের তো অনেক দাম। এত টাকা পাব কোথায়? চল চেয়ারম্যানের কাছে যাই। তার কাছে গেলে মনে হয় কিছু দিতে পারে। ঝন্টু আগ্রহ ভরে বলে, চল যাই। পরের দিন বসু, কালু, ঝন্টু, ফরিদ এই চারজন মিলে চলে যায় চেয়ারম্যানের বাড়ি। সব কিছু খুলে বললে, চেয়ারম্যান তাদের তিনশ টাকা বের করে দেয়। টাকা পেয়ে তো তারা ভীষণ খুশি। টাকা নিয়ে ওই দিক দিয়েই দুইটি ব্যাট কিনে তারপর বাড়ি আসে। একটা ব্যাটের দাম দেড়শ টাকা, আরেকটি ব্যাটের দাম একশ বিশ টাকা। ব্যাট দেখে মধু, কষ্টু এরাও খুব খুশি। নতুন ব্যাট এনেই শুরু হয় খেলা। প্রতিদিন তাদের খেলা চলতেই থাকে। কয়েক মাসের মধ্যে তাদের খেলার বেশ উন্নতি হয়। এর মধ্যে বসু, ঝন্টু, কান্ত, মধু এরা বেশ ভালোই বল করতে পারে। আর অন্যরাও বল করতে পারে তবে এদের মতো না। কালুও তার মোটাসোটা শরীর নিয়ে বল করে, তবে সে স্পিন বল করে। টিভিতে দেখে শিখেছে। দলে সেই একমাত্র স্পিনার। তবে বসু সবচেয়ে ভালো বল করতে পারে। ব্যাটিংয়ে বসু, ফরিদ, কষ্টু, ঝন্টু, কালু এরা ভালো করছে। পঞ্চা, বেনু, পচু, বিধু এরা মোটামুটি পারে। বসু বোলিং ব্যাটিং দুটিতেই ভালো। উইকেট কিপার হিসেবে কখনও কালু, কখনও বেনু থাকে। মাঝে মাঝে পঞ্চাও থাকে। তারা দুটি দলে ভাগ হয়ে খেলা শুরু করে। যতজন থাকে তাদের মধ্যেই দুটি দলে ভাগ হয়ে যায়। যদি বারোজন হয় তাহলে ছয়জন করে ভাগ হয়ে যায় আর দশজন হলে পাঁচজন করে ভাগ হয়ে যায়। যদি বেজোড় হয় তাহলে যে সবচেয়ে কম পারে তাকে, যে দল ব্যাটিং করে সে দলেও খেলে আবার যে দল ফিল্ডিং করে সে দলেও খেলে। এমনও হয়, যে দল একটু দুর্বল সেই দলে একজন বেশি দেয়া হয়। সাধারণত বসুর বিরোধী দলকে বেশি দেয়া হয়। সবাই জানে বসু ভালো খেলে। তবে ভাগ করার সময় ভালো মন্দ মিলিয়ে ভাগ করে, তা না হলে প্রতিযোগিতা হয় না। খেলা জমে ওঠে না। স্কুল থেকে এসে খাওয়া-দাওয়া করেই খেলা শুরু করে। আট ওভার বা দশ ওভার এভাবে খেলে। যদি আরও সময় থাকে তবে আবার পাঁচ-ছয় ওভার করে খেলা হয়। সন্ধ্যে পর্যন্ত চলে খেলা। যতক্ষণ পর্যন্ত বল দেখা যায়। যে দিন স্কুল বন্ধ থাকে সেদিন তো দুপুরে খাওয়ার পরপরই খেলা শুরু হয়ে যায়। যদিও প্রচণ্ড রোদ থাকে, সেই রোদ উপেক্ষা করেই চলে খেলা। তাদের খেলা দেখে তাদের বাবা মায়েরা বলে, এত রোদে কীভাবে খেলছে? অনেক সময় তারা মানাও করে, কিন্তু কে শোনে কার কথা। বসু ভাগ করে, কে কোন পক্ষে খেলবে। কেউ আপত্তি করলে তখন আবার পরিবর্তন করে। এরপর টস করে। কারও কাছে যদি পয়সা থাকে সাধারণত থাকে না। স্কুল যাওয়ার সময় থাকলেও খেলার সময় থাকে না। তারা সবাই ক্রিকেট খেলে লুঙ্গি পরে। কারও গায়ে গেঞ্জি থাকলেও, অনেকের পরনে লুঙ্গি ছাড়া আর কিছুই থাকে না, তো পয়সা থাকবে কোথায়। গাছের পাতা ছিঁড়ে টস করা হয়। গ্রামে পয়সার অভাব থাকলেও, গাছের পাতার তো অভাব নেই। বসু যে পক্ষে থাকে সে পক্ষে বোলিং করার সময়ও বসু প্রথমে বোলিং করে আবার ব্যাটিং করার সময় প্রথমে ব্যাটিং করে। সে যে এটা জোর করে তা না, তার যোগ্যতা অনুসারে সে এটা করে। বাকি সদস্যরা তা সমর্থনও করে। আজ বিকালবেলা ছয়জন করে ভাগ করে শুরু হয় খেলা। একপক্ষে বসু, কালু, পঞ্চা, মধু, কান্ত, বানুয়া। আরেক পক্ষে ঝন্টু, ফরিদ, কষ্টু, পচু, গিরিধারি, বেনু। ছয় ওভার করে খেলা। টসে জিতে বসুরা প্রথমে ব্যাটিং নেয়। উদ্বোধনে নামে বসু আর পঞ্চা। প্রথমেই ছয় মেরে রান শুরু করে বসু। সবাই জানে সে নামলেই চার আর ছয় মারা শুরু করবে। তাই বসু যখন স্ট্রাইকে থাকে, তখন সব ফিল্ডার বাউন্ডারি লাইন বরাবর থাকে। বসু একাই বাইশ রান করে। ছয় ওভার শেষে তাদের রান হয় সাতচল্লিশ। এবার ঝন্টু আর ফরিদ ব্যাট করতে নামে। প্রথমে ফরিদ স্ট্রাইক নেয়। এক রান নিলে এবার স্ট্রাইকে যায় ঝন্টু সে বেশ ভালোই খেলে। প্রথম ওভার শেষ হয়। দ্বিতীয় ওভার বল করতে আসে কান্ত। স্ট্রাইকে ঝন্টু। কোমরের নিচ বরাবর বল, এবার মারতে গিয়ে পরাস্ত হয়, বল এসে লাগে ঝন্টুর সামনে কোমরের কিছু নিচে। সাথে সাথে সে ব্যাট ছেড়ে দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। বসু দৌড়ে কাছে আসে। কালুও কাছে আসে। কালু বলে, নাক চেপে ধর। বসু রেগে বলে, নাক চেপে ধরবে কেন? ঝন্টু ব্যথায় বসে থাকতে না পেরে শুয়ে পড়ে। সবাই ভয় পেয়ে যায়, কান্ত বেশি ভয় পায় কারণ সে বল করছিল। বসু বলে, তাকে কিছু বলিস না, একটু অপেক্ষা কর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর ঝন্টু উঠে বসে। বসু বলে, হাঁটতে পারবি? বসু তাকে হাত ধরে উঠায়, আস্তে আস্তে হাঁটায়। কী, ব্যথা করছে? ঝন্টু ব্যথায় চোখ বন্ধ করে উত্তর দেয়, একটু একটু করছে। তোকে আর খেলতে হবে না। বলে, বসু তাকে বেশ দূরে আইলে বসিয়ে দেয়। আবার খেলা শুরু হয়। এবার আর আগের মতো খেলা জমে ওঠে না। কারণ এবার সবাই একটু সাবধান হয়ে খেলে। যদি ঝন্টুর মতো তাদেরও লাগে। আজকের মতো খেলা এভাবেই শেষ করে সবাই বাড়ি চলে আসে। যে খেলা টিভিতে দেখালে বসুর বিরক্ত লাগত, এখন সেই খেলা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে, কোন ম্যাচটা টিভিতে দেখাবে। এই খেলা এখন বসুর এত ভালো লাগে যে, সে প্রায় সময়ই বল আর ব্যাট নিয়ে পড়ে থাকে। আজ বসুর বাবা ক্ষেতে আলু লাগাচ্ছে। অনেক কাজ। সাথে কয়েকজন লোক নিয়েছে। বসুকে তার বাবা বলেছিল বিকালবেলা ক্ষেতে এসে কাজে একটু সাহায্য করার জন্য। বসুর বড় ভাই কাজে সাহায্য করে, কিন্তু বসু ক্ষেতে যায়নি। তার বাবার একটু রাগ করে। রাতে খাওয়ার সময় বলে, খেলাধুলা করা ভালো তবে সব সময় না। পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা। এই নীতি মেনে চলতে হবে। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কথাগুলো বলছি। জীবনটাকে যদি দুই ভাগে ভাগ করো, পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রথম ভাগ। কর্মজীবন দ্বিতীয় ভাগ বা বিয়ের আগ পর্যন্ত প্রথমভাগ বিয়ের পরে দ্বিতীয় ভাগ। তুমি প্রথম ভাগে যত পরিশ্রম করবে, যত কষ্ট করবে পরবর্তী ভাগে ততই সুখে থাকবে। আর প্রথম ভাগে যদি এই ভাবে হেসে খেলে, আনন্দে জীবন পার করো তাহলে পরবর্তী ভাগ কষ্টের হবে। তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তুমি কখন কষ্ট করতে চাও। একটা সময় কষ্ট করতেই হবে হয় প্রথম ভাগে না হয় দ্বিতীয় ভাগে। এখন যেহেতু বয়স কম এখন কষ্ট করা, পরিশ্রম করা সহজ। কিন্তু শেষ বয়সে কষ্ট করা, পরিশ্রম করা খুব কঠিন। তাই বলি এখন সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাও। বসু মনোযোগের সাথে তার বাবার কথা শুনে। সে কথাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। তার বাবা আরও বলে, এই বয়সে খেলাধুলা দুষ্টুমি একটু হবে, তবে এমন দুষ্টুমি করা যাবে না যা মানুষের বড় ধরনের ক্ষতি করে। আশীর্বাদ এমন জিনিস চোখে দেখা যায় না কিন্তু তোমার সাথে সব সময় থাকবে। এটা অর্জন করতে হয়। সময়ের সাথে সাথে এর গুরুত্ব বুঝতে পারবি। বসুর বাবা এর আগে কোনও দিন বসুকে তার পড়াশোনা বা খেলাধুলা নিয়ে কোনও কথা বলেনি। তার ইচ্ছামতো চলেছে। আজ এভাবে বলার পরে বসু পড়াশোনার প্রতি আরও মনোযোগী হয়ে ওঠে।