বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বা অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে এবং এর প্রায় ৮০ শতাংশই এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে কেন্দ্রীভূত। যদিও বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীলতার সবচেয়ে প্রচলিত ধরণ হলো আঞ্চলিক বিরোধ ও গৃহযুদ্ধ, তবে বহির্বিশ্বের আগ্রাসন, শাসকদের অপসারণ এবং রাজনৈতিক সহিংসতাও দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার একাধিক কারণ সনাক্ত করা হয়েছে, যেমন রাজনৈতিক উত্তেজনা, মানবাধিকার লঙ্ঘন (গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ), অর্থনৈতিক পতন, রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, পরিবেশগত সমস্যা, উদ্বাস্তু বা শরণার্থী সমস্যা, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং নিম্নমানের কাজের পরিবেশ। একথা সত্যি যে, অস্থির এবং অনিশ্চিত পরিবেশে কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে অনেকেই জীবনের ভয়ে তাদের সাহিত্য কর্ম স্বদেশে প্রকাশ করার সাহস করেন না। তবে সেসব দেশে তরুণ কবি এবং সাহিত্যিকদের নতুন এক প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটেছে। তারা নির্ভীক, সচেতন ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন। অস্থির বিশ্বের নয়টি দেশ (আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ইরাক, সুদান, ইয়েমেন, ইউক্রেন, ইথিওপিয়া, মায়ানমার ও সিরিয়া) এবং কাশ্মির থেকে বাইশজন লেখক ও লেখিকার একটি করে গল্প নিয়ে 'অস্থির বিশ্বের নির্বাচিত ছোটোগল্প' সংকলন সাজানো হয়েছে। যেহেতু নির্বাচিত গল্পগুলোর বিষয় এবং বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে বহুমাত্রিকতা, তাই গল্পগুলোকে চারটি পর্বে আলাদা করা হয়েছে: যুদ্ধ, সংঘাত এবং অস্থির সময়ের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা; অস্থির পরিস্থিতির কারণে শরণার্থী হয়ে যাত্রা পথের অভিজ্ঞতা; ভিনদেশে শরণার্থী হয়ে দুঃসহ জীবন-যাপন এবং ফেলে আসা জীবনের স্মৃতি রোমান্থন, এবং মাতৃভূমিতে ফিরে আসার প্রবল টান এবং ফিরে আসার পর হতাশা। প্রতিটি গল্পের শুরুতে রয়েছে গল্পকারের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও তাদের সাহিত্য কর্মের পরিচয় এবং শেষে গল্পসূত্র। আশা করা যায় যে, 'অস্থির বিশ্বের নির্বাচিত ছোটোগল্প' গল্পগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে অস্থির এবং অনিশ্চিত পরিবেশে বেঁচে থাকা মানুষের জীবন সম্পর্কে বাংলাভাষী উৎসাহী ও বিদগ্ধ পাঠকের মনে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
ফজল হাসান সাহিত্যিক ছদ্মনাম। পােষাকী পরিচয় ড. আফজল হােসেন। মৌলিক ছােটগল্প, অনুবাদসাহিত্য এবং ছড়া রচনায় তিনি ইতােমধ্যে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার নিয়মিত সাহিত্য সাময়িকী ও বিশেষ সংখ্যায় এবং সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনলাইন ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে তার মৌলিক এবং অনুবাদ গল্প । এ পর্যন্ত তিনটি মৌলিক ছােটগল্প এবং পাচটি অনুবাদ গল্পের সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলামাটি অনলাইন ম্যাগাজিনে অস্ট্রেলিয়ার চিঠি শিরােনামে নিয়মিত কলাম লিখছেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসাবে ২০০৬ সালে পেয়েছেন প্রিয় অস্ট্রেলিয়া থেকে ‘প্রিয় লেখক পুরস্কার এবং ২০১০ সালে। ‘বাসভূমি’র পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে পেয়েছেন বাসভূমি পুরস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করার পর ফরেস্ট্রিতে। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সপরিবারে বসবাস করছেন ক্যানবেরায়।