আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত সাহিত্যকর্ম খুবই অপ্রতুল। অথচ আমরা আমাদেরকে বীরের জাতি বলে শ্লাঘা বোধ করতে কার্পণ্য করি না। কিন্তু হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিশাল পটভূমিতে আমাদের স্বাধিকারের লড়াই আমাদের সাহিত্যকর্মে বিস্ময়কর রকমে অনুপস্থিত। বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পঞ্চাশ বছর পরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিশাল পটভূমিতে রচিত হল, ”চন্দনা উড়ে গেছে” উপন্যাস। কালের ব্যবধান থাকা সত্বেও এ কাহিনীর বিস্ময়কর ঘটনাপ্রবাহ, গেরিলা যুদ্ধের বুদ্ধিদীপ্ত সাহসিকতা, সফলতা, তাদের বীরত্ব ও বিশাল ত্যাগের বলিষ্ঠ চিত্রায়ন পাঠককে এক মুগ্ধতার আবেশে মোহাবিষ্ট করে শেষ পাতা পর্যন্ত আঠার মত জুড়ে রাখবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বড় অংশটি ছিল গণযোদ্ধার। এরা সংখ্যার দিক থেকে নিয়মিত বাহিনীর চেয়ে অনেক বড় ছিল। এই গণযোদ্ধারা কয়েক সপ্তাহের ট্রেনিং নিয়ে বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, শহরে-বন্দরে ছড়িয়ে পড়ে গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরকে কোণঠাসা করে রাখে। মুক্তিবাহিনীর এ সব গণযোদ্ধা গেরিলাদের নিয়ে খুব একটা সাহিত্যকর্ম রচিত হয়নি। তাই আমাদের মহান গেরিলা যুদ্ধের অনেক কাহিনী এখনো অজানা। এ উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ এমন এক স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও অপার দক্ষতায় বিন্যাস করা হয়েছে, যা পাঠককে কব্জা করে রাখে। এ উপন্যাসের বিশাল পটভূমিতে রয়েছে, শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ থেকে প্রত্যন্ত হাট-বাজার, পাহাড়ী নৃ-গোষ্ঠীর জনপদ, তাদের জুমিয়া জীবন ও মাতৃভুমিকে হানাদারদের দখল মুক্ত করার বিস্ময়কর সম্প্রীতি নিয়ে গণযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ও প্রতি-আক্রমণ, এক তেজোদীপ্ত বীরত্ব গাথার উপাখ্যান। এবং যুদ্ধ শেষে মানবিক উষ্ণতায় বীর বন্দনা। এটি শুধু বলিষ্ঠ দক্ষতায় কারুকার্যময় এক কাহিনীই নয়, এটি সত্তর দশকের শুরুর দিকের এক এনালগ সমাজের বিশ্বাসযোগ্য সামাজিক দলিল, যার আজকের ডিজিটাল যুগে মহামূল্যবান গুরুত্ব রয়েছে। উপন্যাসটির পরতে পরতে আছে সত্তর দশকের আর্থসামাজিক, মানবিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বর্ণনা, আছে বাংলাদেশের তরুণ-যুবাদের প্রতিরোধ যুদ্ধের কাহিনী, কিভাবে তারা খুবই স্বল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় খালি হাতে গেরিলা পদ্ধতিতে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসর জামাত, রাজাকার, আলবদর বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদেরকে রুখে দিয়েছিল। কীভাবে তাদের বাংলার কাদা-মাটিতে পর্যুদস্ত করেছিল, সেইসব ঘটনার রোমহর্ষক অনুপুঙ্খ বর্ণনা। আছে গেরিলাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব , দুঃখ-কষ্ট, আপোষহীন লড়াই, আত্ম-বলিদান, বীরত্ব এবং. গৌরব গাথা। বিজয়ের পঞ্চাশ পরেও বাঙালীর বিজয় গাঁথার এই অনন্য আখ্যান পাঠককে মুগ্ধতার আবেশে বিমোহিত করে রাখবে, তাদের পূর্বসূরির মহান বীরত্বের কাহিনী তাদেরকে ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ধারাবাহিকভাবে উজ্জীবিত করবে। নিঃসন্দেহে এ উপন্যাস এক উচ্চমার্গীয় সাহিত্যমূল্য ধারণ করে। স্বাধিকার, অধিকার, ভালবাসা, গন্ধক, রক্ত, এবং নাইট্রিক এসিডের সংমিশ্রণে এ এক মুক্তির পথ যাত্রা।
আলী রেজা। একাডেমিক নাম মো. আব্দুর রশিদ। টাঙ্গাইল জেলাধীন ভূঞাপুর উপজেলার বরকতপুর গ্রামে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি জন্ম। পিতা মো. বন্দে আলী ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাতা রওশন আরা গৃহিণী। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ আলী রেজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন এমফিল ডিগ্রি। বর্তমানে ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি (সেশন ২০২১-২০২২) গবেষক। পেশা: অধ্যাপনা। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: স্বপ্নরাঙা চোখ (প্রথম প্রকাশ ২০০৭), দ্বিতীয় সংস্করণ ২০২০। উপন্যাস: এতোদিন কোথায় ছিলে (২০০৮); যৈবতী কন্যার মন (২০০৮); প্রেমসুখ প্রেমদুঃখ (২০০৮)। গবেষণাগ্রন্থ: শরৎসাহিত্যে মানবতাবাদ (২০১৮)। প্রবন্ধগ্রন্থ: সাহিত্যে ব্যক্তি ও সমাজ (২০১৯); সাহিত্য ও মুক্তির সংগ্রাম (২০২১)। সামাজিক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা সভাপতি: স্বরবৃত্ত আবৃত্তি সংসদ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। সদস্য সচিব: যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম, ভূঞাপুর উপজেলা শাখা। সাংগঠনিক সম্পাদক: বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, টাঙ্গাইল জেলা শাখা। সাংগঠনিক সম্পাদক: ভূঞাপুর কেন্দ্রীয় সাহিত্য সংসদ, ভূঞাপুর। সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক: বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস), টাঙ্গাইল জেলা শাখা। আজীবন সদস্য: প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ পাঠাগার, ভূঞাপুর। সদস্য: সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ভূঞাপুর। সদস্য: পুষ্পকলি প্রতিবন্ধি বিদ্যালয়, ভূঞাপুর। সদস্য: দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, ভূঞাপুর উপজেলা শাখা। পুরস্কার ও সম্মাননা: লেখাপ্রকাশ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭; বাংলাদেশ কবি-লেখক ফোরাম সম্মাননা ২০১৭; নবদিগন্ত সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭; টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কার ২০২১; e mail: alirezaphilo @gmail.com