কবিতার ভুবনে মোস্তফা পাশার বিচরণ দীর্ঘকাল। দেশ ও কবিতার প্রতি তার ভালোবাসার শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। বিন্দু থেকে বৃত্ত রচনা কিংবা শিকড় থেকে শেখরে উঠার ইচ্ছা কখনো পোষণ করেননি তিনি। রোপিত বীজ শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত হয়ে হবে মহিরুহ-ভাবনায় ঠাঁই পায়নি কখনো। কবিতা লিখে কবি নামধারণ করবেন তা ছিলো স্বপ্নেরও অতীত। তবে নিজের মধ্যে তরঙ্গায়িত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশের শুরু সেই কতকাল। মাঝে যতিচি-জীবনের বেগের কাছে আবেগের সাময়িক পরাজয়। অনেক চড়াই উত্তাই পেরিয়ে আবারো আলোর পথের দেখা-সমর্থ বৃক্ষের গান গাওয়ার প্রয়াস। প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের অনুভূতি চিকিৎসক হিসাবে দেখা প্রথম প্রসবের আনন্দ-বেদনা-উৎসবের সাথে তুলনা করলে অত্যুক্তি করা হবে না। এ গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে কবিতার পুরনো খাতার স্যাঁতসেঁতে হলদে পাতাগুলো সূর্যালোকে মেলে ধরার প্রয়াসের পাশাপাশি সুযোগ হয়েছে সম্প্রতি লেখাগুলোর ঝরঝরে সকালের সতেজ রৌদ্র দেখার। কবিতাগুলোতে রয়েছে তারুণ্য ভরা আশির দশক ও পরিণত বেলার আবেগ-উচ্ছ্বাস-ভালোবাসা সর্বোপরি তার পরিচয়- উপলব্ধি-দৃষ্টিভঙ্গীর সহজ অথছ দৃঢ় উচ্চারণের প্রকাশ ও মিথস্ক্রিয়া। কবিতাগুলোর পড়ার সময় লেখার সময়কাল বিবেচনায় নিলে বোধকরি বিষটি স্পষ্ট হবে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত এই কাব্যগ্রন্থটির ১০০০ কপি দ্রুত নিঃশেষিত হবার অভাবনীয় সাড়ায় অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন কলেবরে আজকের এই পুনর্জন্মের প্রয়াস।
মোস্তফা কামাল পাশা। ‘পাশা’ নামেই সমধিক পরিচিত। ১৯৬৩ সালের ২২ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্ম। ছোটবেলার বেশী সময় কেটেছে শাল-গজারি ঘেরা গাজীপুরে। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর ডিঙিয়ে চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়নে আসেন ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে, অর্জন করেন এমবিবিএস ডিগ্রি। তুখোড় বিতার্কিক, প্রগতিশীল আবৃত্তিকার পাশা সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতির শাখা-প্রশাখায় বিচরণ শেষে সেনা শৃংখলায় নিজেকে সমর্পন করেন। ১৯৮৯ এর শুরুতে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিকিৎসা কোরে কমিশন প্রাপ্ত হন। সেনা চিকিৎসা প্রশাসক হিসেবে তার সাফল্যও প্রণিধানযোগ্য। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর পাশাপাশি যুদ্ধ পরবর্তীকালে ‘অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠনে’ অংশ নিয়ে লাভ করেন কুয়েত সেনা প্রধানের প্রশংসাপত্র। তিনি কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিপসম থেকে ইপিডেমিওলজি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি। ২০১২ সালে সম্পন্ন করেন (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবিতে) গুরুত্বপূর্ণ ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি) এবং ২০১৫ সালে স্ট্রাটেজি ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-এ এম ফিল ডিগ্রি। ২০১৬ সালে বীরত্বপূর্ণ/সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাপ্ত হন সম্মানজনক ‘সেনা পারদর্শিকতা পদক’। ২০১১ সালে সুইজারল্যান্ড থেকে International Law of Armed Conflicts এবং ২০১৫ সালে Military Medical Ethics in Times of Armed Conflict (MME) কোর্স সম্পন্ন করেন। একই দেশে তিনি একাধিকবার অতিথি বক্তা হিসাবে অংশ নেন বিভিন্ন ওয়ার্কসপে। ২০১৪ সালে বেইজিং-এ প্রশিক্ষণ নেন ‘Strengthening of Hospital Emergency and Casualty Department/ Service’- এ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে তার অভিজ্ঞতার থলি সমৃদ্ধ হয়েছে। তিনি দু’বছরের জন্য বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। তিনি বর্তমানে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল ইনস্টিটিউট এর কমান্ড্যান্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) এর সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।