রাতের অন্ধকারে নির্জন আরিপপুর গোরস্থানের পেছন দিকে আটচল্লিশ বছর বয়সী শরিফ ঘাপটি মেরে বসেছিল অনেকক্ষণ ধরে। সে অপেক্ষা করছিল, কখন কোনো একটা কাঁচা কবরে হামলা করবে বুভুক্ষু শেয়ালদের দল। অনাবশ্যকভাবে সে চুলকাচ্ছিল তার গালের ওপরে জমে থাকা কাঁচাপাকা দাড়িগোঁফ আর বসে বসে অজস্র মশার কামড় খাচ্ছিল। তার পা বেয়ে শরীরে উঠে আসছিল ছোট ছোট পিঁপড়ার দল এবং সে তার হাত দিয়ে পিঁপড়াগুলোকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছিল বার বার। এভাবে ঘণ্টা দুয়েক বসে থাকার পর শেয়ালরা দল বেঁধে আক্রমণ করেছিল দিন সাতেক আগের একটা কাঁচা কবরে। কবরটা খুঁড়ে বাঁশ আর চাটাইয়ের আস্তরটার একদিক ভেঙে ফেলেছিল শেয়ালরা। তার পর জন্তুরা লাশটাকে বের করে খাওয়ার জন্য অন্য কোথাও টেনে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। তার আগেই শরিফ বুভুক্ষু শেয়ালদেরকে সেখান থেকে তাড়াতে তাদের চোখে পেন্সিলটর্চ মেরেছিল ক’বার এবং মাটিতে পড়ে থাকা একটা ডাল উঁচিয়ে দৌড়ে গিয়েছিল। শেয়ালগুলো কেই মেই করতে করতে লাশটা ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার পর সে সুস্থির হয়ে নেমেছিল ধসে যাওয়া কবরটায়। সে টর্চটা জে¦লেছিল এবং লক্ষ করে দেখেছিল, সেটা এক জন পুরুষের লাশ। পয়লাতেই সে চুপিচুপি ছিঁড়ে নিয়েছিল প্রায় পচে যাওয়া কাফনের কাপড়ের ছোট একটা টুকরো। তার পর ব্লেড দিয়ে সে কেটে নিয়েছিল অর্ধগলিত লাশটার হাতের আঙুলগুলোর কয়েক টুকরো নখ; ছিঁড়ে নিয়েছিল লাশটার মাথার কয়েক গাছি ময়লা চুল। মাটির একপাশে লাশটা সরিয়ে সে খুঁজে খুঁজে বের করেছিল সেই কবরে শায়িত অনেক পুরোনো কোনো মৃতদেহের ঊরুর হাড়। তারপর হাত-পা দিয়ে মাটি ঠেলে ঠেলে কোনো মতে কবরটা বুজে দিয়ে সে তুলে নিয়েছিল গোরস্থানের কয়েক মুঠো ঝুরঝুরে বেলে মাটি।
জন্ম ২৪ নভেম্বর ১৯৬৩, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়েছেন পাবনা জিলা স্কুল ও পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। পরে উন্নয়ন অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়ামস কলেজ থেকে। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নক্ষত্রের ঘোড়া’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। ফয়জুল ইসলাম ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে উপপ্রধান হিসেবে কর্মরত। পুরস্কারপ্রাপ্ত বই: ‘খোয়াজ খিজিরের সিন্দুক’