সরোজ মোস্তফার কবিতা অসাম্প্রদায়িক সুরমা নদী। যে-নদী একই সাথে দুই পারের জনতাকে গোসল ও স্নান করায়। যে-নদী অতীতে কৃষ্ণলীলার গায়েন আর ভবিষ্যতে শাহজালালের দরগার কবুতর। যে-নদী হিন্দু ও মুসলিম অর্থাৎ সর্বধর্মে বিশ্বাসী। পানি, বাতাস, মাটি আর অগ্নির মতো বিশুদ্ধ তাঁর কবিতাগুলি। তাঁর কবিতা বীজ ভেদ করে জেগে-ওঠা গাছ। প্রাকৃতিক। তাঁর কবিতা আমাকে আর আপনাকে বেঁধে দেয় মাটির সাথে, ধানের সাথে, ফুলের গন্ধের সাথে। তিনি ম্যাজিশিয়ানের মতো আমাদের (পুনরায়) গাছের ভাই, ফুলের বোন বানিয়ে দেন। আমরা অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করি আমাদের পায়ের নিচে জুতা নাই। মাটি। আমরা পাখির সন্তানের মতো জন্মসূত্রে গানের সঙ্গে, সুরের সঙ্গে বসবাস করি। তাঁর কবিতা সেই বিরল স্বপ্নের নদী, যে-নদীর পানি আমাদের শরীর থেকে ধুয়ে নেয় বিভেদের উল্কি। সরোজ মোস্তফার কবিতা পাখির গান। ফুলের গন্ধ। জোনাকির আলো। তাঁর কবিতার চরিত্র নির্ভেজাল, নির্দোষ। যেমন সূর্য দূষিত পানি থেকে জন্ম দেয় বিশুদ্ধ মেঘ। সরোজ মোস্তফা সেই সূর্যপ্রতিম কবি। তার কবিতা পড়তে পড়তে আমাদের মনে ভেসে ওঠে চাঁদ সওদাগরের ডিঙির বহর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিনে তাঁর কবিতা ধান ক্ষেতের হাওয়া আনে আমাদের মনে। গান গাইবার অবসর দেয়। স্বপ্নের সময় দেয়। লিপি রচনার আবেগ দেয়। যেন আমরা স্বপ্নবোঝাই জাহাজ। এসেছি অচিন বন্দর থেকে এখানে এই পিতৃভূমিতে। রোপন করে যাব সন্তানের গাছ। ফসলের চারা। মেঘের জন্মের ব্যাকুলতা। সরোজ মোস্তাফার কবিতার ভঙ্গি শিশুর প্রতি মায়ের ভঙ্গির মতো। স্নিগ্ধ। সরল। অভিনব এবং অনিন্দ্য। তাঁর কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয় : জীবন একটা গান শেখার আনন্দ ছাড়া কিছু নয়। মুহম্মদ ইমদাদ