বাংলা কবিতার প্রাগ্রসর পাঠকদের কাছে ‘আল মুজাহিদীর শ্রেষ্ঠ কবিতা’র গ্রন্থ প্রকাশ একটি আনন্দের সংবাদ। আল মুজাহিদী ষাটের দশকের শীর্ষস্থানীয় কবি। তিনি কবিতার ঐতিহ্যকে অনন্যপূর্বতায় সংস্থাপিত করার এক সুদক্ষ কারুকার। মানুষের প্রতিটি মুহূর্তের নিঃশ্বাস এক পলকে অতীত হয়ে যায়। এক অর্থে মানুষ তার অতীতবেদ্য হৃদয় ও অনুভূতি নিয়ে যাত্রা করে, সামনের দিকে— জীবন ও সময়ের সম্ভাবনার দিকে। জীবন্ত আলো-বাতাসের আবাহন তাঁর সৃষ্টিকর্মে। পৃথিবীর শুভতর, অধুনাতন বার্তা বয়ে বেড়ান তিনি। তিনি প্রধানত কবি। এবং শক্তিমান গদ্যশিল্পীও। মননশীলতায় ভাস্বর তাঁর অভিজ্ঞা। কবিতায় তাঁর স্বভূমি-স্বদেশ প্রবলভাবে মূর্ত। মানব সম্প্রীতির সমুজ্জ্বল সম্ভাষে স্ফূর্ত। তাঁর কবিতা সহজ-সম্ভোগে অধিকার করে নেয় পাঠকের হৃদয়। আল মুজাহিদী কাল ও সমাজ সচেতন, মৃত্তিকা-মনস্ক বিশ্ববীক্ষণের কবি। স্বভূমি, স্বদেশ এই সমতটের লোকায়তিক ঐতিহ্য বন্দিশে আত্মমগ্ন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের রক্তঝরা সংঘাতের সহৃদয় ব্যাখ্যাতাও। মানবঅস্তিত্ব ও সমকালীন অবস্থানের ধ্রুবপদ ভাষ্যকার। শিল্পে পুরাণ, মৃত্তিকা ও জীবনের মর্মভূমে প্রোথিত শেকড় সন্ধানী পুরুষ। প্রাতিস্বিক চেতনা ভাষ্যে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে তাঁর কবিতার প্রতিটি ছত্র। ধ্রুপদী ব্যঞ্জনা এবং ভাষার প্রগাঢ় স্বকীয়তায় প্রদীপ্ত তাঁর কবিতাপৃথিবী। ‘আল মুজাহিদীর শ্রেষ্ঠ কবিতা’র সঙ্কলনটি সমকালীন, নান্দনিক অভিজ্ঞতার এক অনন্যপূর্ব অর্জন। পাঠকের মানস দিগন্তে নতুন আলোর উদ্ভাস। সম্বুদ্ধ বিভাসন। এখানে প্রেম-প্রণয়, প্রকৃতি এবং একটি মানবিক পৃথিবীই পুনর্নির্মিত হয়েছে। তিনি দ্রোহে দগ্ধ। তাই দর্পিত দ্রোহী তাঁর ভেতরে সেই কৃষ্ণাগ্নি জ্বলে ওঠে অনিবার।