আমি প্রথম বিলেত যাই আজ থেকে এক যুগ আগে। সুদূর লন্ডনে যাওয়ার মতো অর্থকড়ি আমার হাতে একদম ছিল না। হিথরো বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলাম প্রায় কপর্দকহীন অবস্থায়। মুখে ছিল আল্লাহ রসূলের নাম, হাতে সদ্যকেনা লাগেজ ও বৃত্তির কাগজ। আমার বুকপকেটে খুচরো পাউন্ড- ব্যাঙের আধুলি! ব্যাপারটা বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার সাথে তুলনীয়। লন্ডনে এসে অবস্থা হলো এমন, যাকে বলা যেতে পারে-লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। বিলেতের পুরোনো রাজপথ, ছাইরঙা বাড়িঘর, আকাশচুম্বী অট্টালিকা, সমৃদ্ধ জাদুঘর, প্রাণময় উদ্যান, পাথুরে গির্জা আর মুখরিত রেস্তোরাঁ দেখে মুগ্ধই হয়েছি। বর্ণিল শপিং সেন্টার বা জমকালো বার-পাব খুব একটা কাছে না টানলেও সবচেয়ে মনোহর লাগত চমৎকার সব গণপাঠাগার, উঁচু মার্গের বিশ্ববিদ্যালয়, জবুথবু স্থাপনা আর ভূগর্ভস্থ রেল। কত রং-বেরঙের মানুষের আনাগোনা যে দেখেছি ইংল্যান্ডের রাজধানী শহরে। অস্বীকার করব না, ব্যস্ত মানুষের ভিড়ে লন্ডন-সুন্দরীদের আলাদা করে নজরে পড়ত। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে বিলেতের পথে-প্রান্তরে ঘুরতাম। ইতিহাস-ঐতিহ্যের হীরে- জহরত খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে যেতাম। সহপাঠী-বন্ধুদের সাথেও কফির কবোষ্ণ আড্ডায় কাটিয়েছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিলেতি আদব-কেতা, আইন আদালত, সাহিত্য-সংস্কৃতির কিছুটা আধার ও আধেয় এঁকেছিলাম আমার ভ্রমণগদ্য 'বিলেতি সৌরভ'-এ। পশ্চিমের 'স্বর্গ হতে চ্যুত' হয়ে স্বদেশে ফিরে এলেও আবার প্রায় ফি বছরই লন্ডনে ছুটে গিয়েছি নানান ছুতোয়-কাজে- অকাজে, যাত্রাবিরতিতে, সফরসঙ্গী হিসেবে, অবকাশে বা প্রশিক্ষণে। তবে দুদিনের অতিথির মতো।