বাংলাদেশ উত্তর আধুনিক দর্শন-ভাবনা চর্চার তিন দশক পূর্তি হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গবেষণা অভিসন্দর্ভ ও গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। সেখান থেকে বাছাইকৃত ও নির্বাচিত চৌত্রিশটি লেখা নিয়ে ‘উত্তর আধুনিকতা ১৯৯৩-২০২৩’ শীর্ষক সম্পাদনা গ্রন্থটি প্রকাশিত হলো। এতে উত্তর আধুনিক চেতনার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা যেমন সন্বিবেশিত হয়েছে--তেমনি পশ্চিমা পোস্টমডার্ন ভাবনার আলোকে কিছু লেখাও ছাপা হয়েছে। কারণ, উত্তর আধুনিকতার সঙ্গে পোস্টমডার্নিজম তথা আধুনিকোত্তরবাদের সাযুজ্য কী-রকম তা অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জিজ্ঞাসা মেটাতে সক্ষম হবে। পরিতাপের বিষয় ছোটকাগজ ‘লিরিক’ গত তিন দশকে পাঁচটি ‘উত্তর আধুনিক কবিতা সংখ্যা’র মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা পশ্চিমা সব মতবাদের অন্ধ বিরোধী নই। বরং সম-মাত্রিক বিপরীত অভিঘাতে সম্মুখবর্তী হতে চাই। পুঁজিবাদ যখন ছদ্মবেশে বিশ্বে তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর--সেই রকম পরিস্থিতিতে আমরা পশ্চিমা এই মূঢ়তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আগ্রহী। তাই নতুন অন্তর্বয়ানের মাধ্যমে পশ্চিমা মহা-আখ্যান তত্ত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ। অমিতাভ গুপ্তের ভাষায়--‘বিশ শতকের মননবিশ্বে বাঙালির প্রধানতম অবদানগুলির একটি উত্তর আধুনিকতাবাদ। বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনে প্রাতীচ্যকেন্দ্রিক ভাবদাসত্বের বিরোধিতা করে স্ব-দেশ-কাল-লগ্নতায় স্বরাজের সন্ধানী এই আন্দোলন।’ তাই বলতে হয়--বাঙালি জাতিসত্তার অংশীদার উত্তর আধুনিকতা। এই জটিল তত্ত্বের সহজ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আছে এ গ্রন্থের অনেক লেখায়। তাই অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে এ-গ্রন্থটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। বোদ্ধা পাঠক এখান থেকে বহু অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন বলে বিশ্বাস করি।