জীবনের কথা যখন উপন্যাস হয়ে আসে, তখন নাসিমা খান কথাসাহিত্যিক হিসেবে বোনেন জীবনের কথা জাল। আর সেখানে বুনন হয় এভাবে- বাবাকে বলতেন, তুমি ডাক্তার ডাকো। আমার জ্বর মেপে নিরানব্বই পাওয়া গেলে বাবা বলতেন, সর্দি জ্বর সেরে যাবে, মাত্র নিরানব্বই। মা খুব বিশ্রী ভাবে বাবার দিকে তাকিয়ে বলতেন, তুই বুঝবি কী? নিরানব্বই মানেই খারাপ এরকম খুঁতখুঁত জ্বর ভালো না। বাবা সিংহের মতো হুঙ্কার দিয়ে মার চুল ধরে ঝুঁলে পড়তেন। বিলকিস খালা ছাড়াতে আসলে বাবা বলতেন, কাজের বুয়া এখানে কেন? পারিবারিক ব্যাপার তোমার এত নাক গলে কেন? যাও নিজের কাজে যাও। তারপর মাকে কিল-ঘুষি মারতেন আর বলতেন, তুই করে বলার শখ হয়েছে না? খুন করে ফেলব! মা নীরবে হজম করতেন। চুপচাপ ঘওে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তেন। মায়ের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তা। আমি পাশে বসলেই মা বুকে টেনে নিতেন। বুকের ভিতর চেপে ধরে সারা মুখে আমার চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতেন। আর অঝোর ধারায় পানি পড়তা মার চোখ দিয়ে। হয়তো তখনই মা ঠিক করে ফেলেছিলেন বাবার সব থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে চলে যাবেন। ভৈরবে থইথই জল। জল কেটে চলছে আমাদের নৌকা। বাবার দুহাঁটুর ভাজে আমাকে চেপে ধরে রেখেছেন। আমার অসহ্য লাগছে। বাবা ছাড়ো কে কার কথা শোনে কিছুতেই আমাকে পানিতে পড়তে দেবেন না। বাবার হাঁটুর ফাঁক গলে দেখছি আমার দূরাবস্থা দেখে একজন যুবক মুচকি মুচকি হাসছেন। আমার লজ্জা করছে। কিন্তু বাবা ছোট শিশুর মতো আমাকে জাপ্টে ধরে আছেন।’ কথাসাহিত্যিক নাসিমা খান-এর অনবদ্য উপন্যাস ‘বকুল ফুল’ পাঠককে দেবে ভালোবাসার রঙ্গিন ছোঁয়া...
দূর পশ্চিমে মার্কিন মুলুকে অভিবাসী নাসিমা খানের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃকবাস ময়মনসিংহ। পড়াশোনা করেছেন মতিঝিল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক সম্মানসহ স্নাতকোত্তর। পরে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে আর্লি চাইল্ডহুড অ্যান্ড এলিমেন্টারি এডুকেশনে মাস্টার্স পাস করেন। গত শতাব্দীর ১৯৯০ থেকে '৯৩ পর্যন্ত সাংবাদিকতা করেছেন বার্তা সংস্থা ইউএনবি এবং অধুনালুপ্ত দৈনিক সংবাদপত্র আজকের কাগজে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক-এ পাবলিক এ্যান্ড প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় ব্যাপৃত ১৯৯৬ সাল থেকে। ইতিপূর্বে দুটি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। স্বদেশে ফেরা- মনের নিভৃতে লালিত স্বপ্ন নাসিমা খানের। সীমান্ত ও কাঁটাতারবিহীন বিশ্ব তাঁর প্রিয় দর্শন।