আমার কথা অগণিত শহীদের রক্তমাখা আমাদের মহান একাত্তর। ১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ দেশের নিরপরাধ জনগণের ওপর চালিয়েছিল ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম নিপীড়ন। নিরস্ত্র জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল অঘোষিত যুদ্ধ। কৌশল বেছে নিয়েছিল হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। অসহায় জনগনের উপর চালিয়েছিল পৈশাচিক নির্যাতন। অপরাধের হেন মাত্রা নেই যা তারা অতিক্রম করেনি। কিন্তু স্বভাবে শান্ত, যুদ্ধবিমুখ, শান্তিপ্রিয় এ দেশের জনগণ থেমে থাকেনি। রুখে দাঁড়িয়েছিল হার্মাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে। পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে অসম লড়াইয়ে মরণপণ মেতে উঠেছিল। পেশাদার, যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত, যুদ্ধবাজ সৈনিকদের পরাজিত করে ছিনিয়ে এনেছিল পলাশীর প্রান্তরে অস্ত যাওয়া বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। তবে স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতিকে বড় কঠিন মূল্য দিতে হয়েছে। আমার ‘গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ বইটির প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশের পর আমার ছোটভাই সাংবাদিক সুবীর দাস আমাকে কিশোরদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক বই লেখার তাগিদ দেয়। সুবীর দাসের পরিকল্পনা ও উৎসাহে লেখা হলো যুদ্ধদিনের গল্প। আমি ওর দীর্ঘায়ু কামনা করি। আমার এগারো বছর বয়সী নাতনী আলোকপর্ণা বইয়ের ছবিগুলো এঁকে দিয়েছে। ওর কর্মযজ্ঞ জয়যুক্ত হোক। বইটিতে ‘গণমানুষের স্মৃতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ বইয়ের প্রথম খণ্ড ও দ্বিতীয় খণ্ড থেকে বিশেষ কিছু অংশ সংযোজন করা হয়েছে। বাইরে থেকেও কিছু অংশ সংগৃহীত হয়েছে। উভয় লেখাতেই উন্মোচিত হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক সত্য। কোনো একটি গল্প বানানো তো নয়ই, বাড়িয়েও বলা হয়নি। পাঠককে এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রের নানা আবিলতায় আমাদের মহত্তম অর্জন কলুষিত হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃতি আর বিভ্রান্তির কবলে পড়ে হয়েছে ক্ষত বিক্ষত। অথচ জনগণের সর্বোচ্চ মহৎ ত্যাগের বিনিময়ে এসেছে স্বাধীনতা। কী ঘটেছিল মহান একাত্তরে? নতুন প্রজন্মের কাছে সেই বয়ান তুলে ধরতেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। শঙ্করী দাস