১৯১১ সালে দিল্লির দরবারে যেদিন রাজা পঞ্চম জর্জ বঙ্গভঙ্গ আদেশ রদ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঠিক তার পরদিনই ঢাকার বুড়িগঙ্গায় ভেসে আসে এক যুবকের লাশ। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্চ থেকে গুলি মাথায় লাগে। বড় কাটরার যে দিকটাতে বিবি মরিয়ম কামান বসানো ছিল, সেখানে অনেক কচুরিপানার মধ্যে মুখ উপুড় হয়ে পড়েছিল লাশটা । প্রথমে নৌকার মাঝি— তারপর জানতে পারে পুলিশ। আরে এ তো এক মুসলমান তরুণের লাশ- যার সঙ্গে নবাব পরিবারের সম্পর্ক ছিল! শুরু হয় ব্রিটিশ পুলিশের অনুসন্ধান। টানটান উত্তেজনায় এগুতে থাকা এটা কোনো রহস্য উপন্যাসের কাহিনী নয়- এটা একটা সময়ের ইতিহাসকে ফিরে দেখার গল্প। ১৯০৫ থেকে ১৯১১। ভীষণ বিদঘুটে এক সময়। একদিকে লর্ড কার্জনের প্রযত্নে নতুন প্রদেশ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা, অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের মোড়কে হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভারতের স্বাধীনতার ডাক। কোনদিকে যাবে বাঙালি মুসলমান? সেই সময়ের ঢাকা, তৎকালীন পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক আন্দোলন, রাজনীতিতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ, সর্বক্ষেত্রে দিশাহীন বাঙালি মুসলমানের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই-সংগ্রাম- তৎকালীন ঢাকায় হিন্দু মুসলমানের সম্প্রীতিময় সহাবস্থান- এসব নিয়েই সমকালের কথাশিল্পী আহমদ বশীর লিখেছেন এক ইতিহাস-আশ্রয়ী রাজনৈতিক উপন্যাস- ‘ত্রিশঙ্কু'। সেই সময়ের উত্থান-পতনের কারণগুলোকে খুঁজে নেবার চেষ্টা করেছেন তিনি কয়েকটি চরিত্রের জীবনধারায়, কিছু প্রশ্ন করে যেন উত্তর খোঁজার প্রয়াস ।
আহমদ বশীরের প্রথম গল্পগ্রন্থ অন্য পটভূমি প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে, যা হুমায়ুন কাদির সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিল ১৯৮২-তে। তারপর আরো দুটো ছোটগল্প সংকলন প্রকাশিত হলেও লেখক কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সাহিত্যজগৎ তেকে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে চলে যান। হঠাৎ মৌনতা ভেঙে, কোনো এক মহাশক্তির কল্যাণে, আবার লেখালেখি শুরু করেছেন। রাহুচক্রের আহ্বানে আবার যদি কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যান এই লেখক, কারও বুঝি কিছু বলার থাকবে না সেই দিন।