দুরবিন উল্টো হয়ে পড়ে আছে গ্যালিলিও অন্ধ; সেই কবেই নিভে গেছে আলেকজান্দ্রিয়া; নালন্দার দীর্ঘশ্বাস গোপনে হজম করে বেড়ে উঠেছে ইতিহাসের অন্ধকার; বহু শতাব্দী নিভৃতে কেঁদেছে মহেঞ্জোদারো। আমার বুকের ভেতরে নিয়ত পুড়ছেন জিওর্দানো ব্রুনো; লাঞ্ছিত হচ্ছেন হাইপেশিয়া; বেঘোরে গর্দানের ভয়ে অপমানিত আলোক-বর্তিকার মতো মাথা নত করে ঘরে ফিরছেন ইমানুয়েল কান্ট; দ্রাবিঢ়-রমণীর অসহায়ত্বের উঠোনে সগর্বে গজিয়ে ওঠা যে ধর্ষকামী সভ্যতা, তার সাথে আঁতাত করে এই যে বৈঠা বাওয়ার তোড়; একে কি জীবন বলে ! দুরবিন উল্টো হয়ে পড়ে আছে:- এই স্বপ্নের বাগানে কোনো কুসুমের দ্যাখা নেই ব্যক্তিজীবনে, এবং সমাজ, রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক ঘুর্ণায়নে একের পর এক বিবিধ অন্ধকারের আগমন ঘটে চলেছে। সকল অন্ধকার সবার চোখে পড়ে না। সবাই একই ঘটনা বা দৃশ্যকে অন্ধকার বলে মনেও করেন না। কিন্তু যে-চোখ, তা দেখে, তার কাছে এগুলো অসহ্য বেদনার। অমেয় অন্ধকারের পরিত্রাণহীন বেদনা তাকে কুরে কুরে খায়। সেইসব পরিত্রাণহীন অন্ধকার রাজ্যের কিছু কিছু দৃশ্যকে কবিতায়ন করবার চেষ্টা এই পুস্তকটির প্রধান বৈশিষ্ট্য। এর এক-একটি কবিতা যেন আলোক-প্রত্যাশী প্রাণের পারিজাতে প্রষ্ফূটিত অন্ধকার রাজ্যের নিশানা...। এই বইয়ের পা-ুলিপি পড়ে নব্বইয়ের কবি শামীম নওরোজ লিখেছেন- ‘কবি বলছেন ‘অন্ধকার সিরিজ’, আমি এই কাব্যগ্রন্থের সকল কবিতা পড়ে বলতে চাচ্ছি ‘আলো সিরিজ’। আমার মনে হচ্ছে এই কাব্যের সকল শব্দে, পংক্তিতে ছড়িয়ে আছে আলো'--
"কুমার দীপ একজন কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার এবং গবেষকও বটে।১৯৭৮ সালের ২৬শে মার্চ, স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে এক ঝড়-জলের রাতে মায়ের অষ্টম সন্তান হিসেবে ভূমিষ্ঠ হন দীপ। নাড়িমাটি : সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া গ্রাম। পড়ালেখা : ভুরুলিয়া নাকবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় [পূর্বনাম জেএন হাইস্কুল] থেকে এসএসি, শ্যামনগর সরকারি মহসিন ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। উচ্চতর গবেষণা শুরু করলেও পারিবারিক কারণে শেষ করা হয়ে ওঠেনি । পেশা : শিক্ষকতা। উপযুক্ত বইপড়া, গান শোনা এবং প্রকৃতির সান্নিধ্য- বড়ই প্রিয় তাঁর। ইতিহাসচেতনা, সংস্কৃতিবোধ, নান্দনিকতা, মুক্তবুদ্ধি এবং মানবতার প্রতি সুগভীর অনুরাগই কুমার দীপের লেখালিখির পাথেয়। প্রকাশিত গ্রন্থ : কাব্য : কোথাও কোনো মানুষ নেই; ঘৃণার পিরিচে মুখ; রটে যাচ্ছে আঁধার; মাতাল রাতের চাঁদ; অন্ধকারের মালতিগুচ্ছ; কালান্ধ নূপুরের ধ্বনি। গল্প : ভালোবাসার উল্টোরথে; যে পাখি ফিরতে পারে না নীড়ে। প্রবন্ধ : নান্দনিক শামসুর রাহমান; আধুনিক বাংলা সাহিত্য : পাঠ ও প্রতিকৃতি; অনন্য শামসুর রাহমান ( কলকাতা); বাংলা কবিতায় ঐতিহ্য ও অন্যান্য অনুষঙ্গ; কথাশিল্পের আঙিনায়। শিশুতোষ গল্প : পিয়ালের শিয়াল পোষার শখ। সম্পাদিত পত্রিকা : অর্চি ( কবিতাকাগজ; একটি সংখ্যা বের হয়েছিলো ২০০১ সালে)। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার / সম্মাননা : গীতিকবিতার জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-ডেইলি স্টার কর্তৃক ‘সেলিব্রেটিং লাইফ এ্যাওয়ার্ড’ ২০১৫ ও ২০১৬। "