সংস্কৃতি নিয়ে বাঙালি মহলে এক ধরনের ধোঁয়াশা আছে। অধিকাংশের কাছেই সংস্কৃতির অর্থ হলো নাচ, গান, চলচ্চিত্র ও চিত্রকলার নান্দনিক সমাহার। কিন্তু সংস্কৃতির পরিধি এতটা সংকীর্ণ নয় । প্রকৃত অর্থে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি আমাদের যাপিতজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবই সংস্কৃতির আওতাধীন। দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানীরা সংস্কৃতির জটিল জগৎ নিয়ে বিস্তর ভেবেছেন। তাঁদের সেই ভাবনার সূত্র ধরেই আবিষ্কৃত হয়েছে সংস্কৃতিতত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের অবাধ ক্ষেত্র। কিন্তু সংস্কৃতির যেমন রূপান্তর ঘটে, সংস্কৃতিচিন্তাও তেমন পালাবদলের পথে হাঁটে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক দোলাচলের ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠে সংস্কৃতির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। জনসাধারণ সংস্কৃতির অন্তর্গত রাজনীতির জটিল প্যাচ খুলতে পারেন না নিজেদের অজ্ঞতার কারণেই । সংস্কৃতিচিন্তার কারখানা গ্রন্থটি উল্লিখিত অজ্ঞতা নির্মূলে সহায়তা করবে বলে আমাদের ধারণা। সংস্কৃতি কী, সংস্কৃতিতত্ত্ব কী, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন কী—এসব আলোচিত বিষয়ের সঙ্গে এতে যুক্ত হয়েছে প্রভাবশালী সংস্কৃতিতাত্ত্বিকদের অনন্যসাধারণ চিন্তারাজি। ফার্দিনান্দ দ্য সস্যুর, দেরিদা, মিশেল ফুকো, রোলা বার্থ, ক্লদ লেভি-স্ত্রস, টিএস এলিয়ট, পিয়েরে বর্দু, তালাল আসাদ ছাড়াও বাঙালি ভাবুক রণজিৎ গুহ এই গ্রন্থের শিল্পপ্রভা। যারা সংস্কৃতির চুলচেরা বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য সংস্কৃতিচিন্তার কারখানা নির্বিকল্প মাধ্যম। কারণ এতে ব্যবহৃত ভাষা ও রচনাশৈলীতে কোনো রকম দুর্বোধ্যতা নেই। লেখাপড়া জানা যে কেউ এই গ্রন্থভুক্ত প্রতিটি রচনার সঙ্গে সহজেই একাত্ম হতে পারবেন বলে আশা করা যায়