কবি সালাম তাসির। দীর্ঘদিনের সাধনার ভেতর দিয়ে কবিতার চারণভূমিতে একটু একটু করে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। যাপিত জীবনের নানান অনুষঙ্গে ফেলে আসা কৈশোর, যৌবনের নস্টালজিয়া তাঁকে তাড়া করে ফেরে। তাইতো আসন্ন সন্ধ্যার লগ্ন-- গোধূলি বেলায় সাঁঝের মায়ার মতো প্রেয়সীকে তাঁর চোখে সৃষ্টির অপূর্ব লাবণ্যময় বলে মনে হয়। কবি প্রেমের মূচ্ছর্নায় বিমোহিত হয়ে পড়েন। প্রতীক্ষা মানুষকে পরিপূর্ণ করে, করে ঝলসে ওঠা বারুদের রক্তিম আভার মতো। একসময় প্রতীক্ষার অবসান ঘটে কাক্সিক্ষত চাওয়া-পাওয়ায় বিমোহিত করে-- উদ্বেলিত করে। সময়ের উর্ণাজাল ছিন্ন করে একদিন কবি মোহবিষ্ট হলে তাঁর উচ্চারিত শব্দযুগল আলিঙ্গনে অবরুদ্ধ হয়। সেই থেকে প্রেমের ধ্রুপদী উঠোনে কবিতার লিরিকে রচনা করেন-- প্রেমময় সোনালী অধ্যায়ের সুনীল উপাখ্যান। আমরা যদি সালাম তাসিরের দু’একটা কবিতার পঙ্ক্তি পাঠ করি তবে তাঁর সম্বন্ধে সম্যক একটা ধারণা পেতে পারি। তিনি মূলত প্রেমের কবি। প্রেম তাঁর কবিতার উপজীব্য বিষয় হিসেবে ধরা দেয়। প্রেমের উচ্ছ্বাসে আর সব কিছু ম্রিয়মান হয়ে যায়। যেমন-- যাযাবর প্রেম মায়াবিনী হরিণ চোখে/ ঘুম ঘুম বালিকার সূর্যকরোজ্জ্বল হাসি/ ছায়ামুখ মরীচিকার মতো মরুভূমির জল/ আগুন অন্ধকারে সমুদ্র হয়ে যায়। আবার-- ভাঁজখোলা চিঠির মতো/ সুগন্ধি বিকেল তুমি/ সন্ধ্যার অক্ষরে সাজানো পূর্ণিমা রাত। কিংবা-- বন্ধু! তোমার নগ্ন হাত দুটোকে/ স্পর্শ করা হয় না আর.../ যে হাতে প্রাণের স্পন্দন ছিলো/ ভালোবাসার অনুভূতি ছিলো। অথবা অকাল সন্ধ্যার মতো/ স্বর্ণলতার দেহে ঐশ্বরিক প্রেম। তাঁর কবিতায় নান্দনিক উপমায় শব্দের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়Ñ যদি ক্ষমা করো/ আমি পাখির কণ্ঠে এঁকে দেবো সতেজ হাওয়া/ মৌমাছির গুঞ্জন/কিংবা রমণীর মন। এভাবেই আমরা কবি সালাম তাসিরকে পাবো তাঁর কবিতাগ্রন্থ ‘প্রেমের ধ্রুপদী উঠোনে’। পাঠক তাঁর কবিতা পাঠে নিশ্চয় মুগ্ধ হবেন, একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।