ষাটের দশকের গোড়ার দিকে সূচিত দৈনিক আজাদী এর আতুরঘর কোহিনূর প্রেসের অনন্য ভূমিকা রয়েছে আমাদের ভাষা আন্দোলনের সাফল্যে। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একটি আঞ্চলিক পত্রিকা হলেও পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের মুখপত্র হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে পথ চলেছে দৈনিক আজাদী। আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল ঊনিশশো ষাটের দশক, বিশেষ করে ১৯৬৬ এর ছয় দফা, তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ এর বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড, এবং ১৯৮৯ এর গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র খ্যাত দৈনিক আজাদী এর অনন্য ভূমিকা রয়েছে। "বাঙালির সমাজমানস ও রাজনৈতিক সচেতনতা বিনির্মাণে দৈনিক আজাদ ও আজাদীর ভূমিকা (১৯৩৬- ১৯৯০)” শীর্ষক গবেষণার প্রতিফলন এই গ্রন্থ। বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মানস গঠনে উভয় পত্রিকার অবদান অনুসন্ধানের একটি প্রচেষ্টা হলো এই গবেষণার অভিপ্রায়। ১৯৩৬ সাল থেকে দৈনিক আজাদ এর প্রকাশনার সমাপনী বছর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময়কে ধারণ করেছে গবেষণা কর্মটি। এই সময়ে গেঁথে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারত-পাকিস্তান বিভাজন, ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা চড়াই উত্রাইয়ের ঘটনা-প্রবাহ। এ সমস্ত ঘটনায় পত্রিকা দু'টির ভূমিকা বিশ্লেষণের চেষ্টা রয়েছে এই গ্রন্থে। ।। প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী মো. সেকান্দর চৌধুরী ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী গোলাম আলী চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর (১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি একই বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে খ্যাতিমান শিক্ষক প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ আলমের তত্ত্বাবধানে 'বাংলার মুসলিম সমাজ ও রাজনীতি' বিষয়ে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ড. সেকান্দর চৌধুরী বিভাগীয় চেয়ারম্যানসহ চারবার কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম পরিচালক এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য প্রফেসর সেকান্দর চৌধুরী দুই মেয়াদে চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে ছয়জন গবেষক পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁর গবেষণার মূল বিষয়বস্তু হলো মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা। দেশ-বিদেশে প্রকাশিত তাঁর গবেষণা প্রবন্ধ, নিবন্ধের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। গবেষণা গ্রন্থ ছাড়াও সমসাময়িক রাজনীতি, ইতিহাস তথা শিক্ষা নিয়ে তাঁর একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ।।। ড. মাছুম আহমেদ মাছুম আহমেদ ঢাকার বাড্ডা থানার বড় বেরাইদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় ক্ষেত্রে ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করেন। ২০০৪ সালে সাংবাদিকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু। সাংবাদিকতার ওপর তিনি পূর্ণাঙ্গ বৃত্তিসহ জার্মানি ও সুইডেনে দুটি ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ২০০৮ সালের আগস্টে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে 'সাংবিধানিক ন্যায়বিচার' বিষয়ে আইনশাস্ত্রে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনৈতিক দর্শন তাঁর গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হলেও পাশ্চাত্য ও দূর প্রাচ্যের দর্শন, জার্মান ভাববাদ, স্বাধীনতার দর্শন, এবং পরীক্ষামূলক দর্শনের পঠন-পাঠনেও তিনি যুক্ত রয়েছেন। পরীক্ষামূলক দর্শনের ওপর ইতোমধ্যে তাঁর দুইটি গ্রন্থও বেরিয়েছে। দেশে-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে তাঁর বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ড. মাছুম আহমেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্থার সঙ্গেও তিনি যুক্ত।