প্রায় দুই দশক ধরে সাহিত্যচর্চায় আত্মনিবেদিত লেখিকা রহিমা আক্তার মৌ এই প্রথম একটি উপন্যাস লিখলেন, যার নাম ‘একাকী আমি ও অরণ্য’। অবশ্য ছোটগল্প ও শিশুসাহিত্য নিয়ে কথাসাহিত্যের জগতে অনেক আগেই ঘটেছে তাঁর আলোকিত পদার্পণ। তিনি পাঁচটি গল্পগ্রন্থ ও ছয়টি শিশুতোষ গ্রন্থের রচয়িত্রী। এখানেই শেষ নয়, তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়েও অন্তত গোটা চারেক সমৃদ্ধ গ্রন্থের প্রণেতা। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাঁর এই কৃতি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এছাড়া বিবিধ বিষয়েও তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ রয়েছে। সর্বোপরি, তিনি একাধারে কলামিস্ট, ফিচারলেখক ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যে তাঁর অদম্য সাধনা ও উজ্জ্বল কর্মযজ্ঞ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। লেখিকা ‘একাকী আমি ও অরণ্য’ গ্রন্থে পাঠকদের জন্য একটি অনাস্বাদিতপূর্ব গল্প উপহার দিয়েছেন। পটভূমি, বিস্তার, ক্লাইমেক্স ও পরিসমাপ্তি এসব নানা দিক বিচার করে আমি বলব, এটি একটি অনন্য ও সুন্দর সৃষ্টি হয়েছে। একজন কিশোরীর অন্তরে সংগোপনে লালিত একতরফা প্রেম দীর্ঘ বিরতির পর প্রেমাস্পদের সান্নিধ্যে যে বাস্তবতা ও পরিণতির সম্মুখীন হয়েছিল তারই সুচারু বর্ণনা রয়েছে উপন্যাসটিতে। লেখিকা প্রেমাকাঙ্খী তরুণীর মনস্তাত্ত্বিক পরিস্থিতি ও একলা মনে প্রেমিককে নিয়ে কল্পভুমে বিচরণের নানা অবস্থাও ফুটিয়ে তুলেছেন। কাহিনি বলতে গিয়ে তিনি পারিপার্শ্বিক অবস্থার সুন্দর বিবৃতি দিয়েছেন। দৈনন্দিন খুঁটিনাটি বিষয়, নগরজীবনের ও চলার পথের দৃশ্য ও ঘটনা এবং রাস্তাঘাটের নানা তুচ্ছ সমস্যাগুলোও তার চোখ এড়ায়নি। সেখানে বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার মানুষের নানা বর্ণনাও উঠে এসেছে। আমরা জানি, একটি চিত্রশিল্পের মূল ছবিটি যেমন প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠা করা হয়, একটি ভালো কবিতায়ও যেমন নানা চিত্রকল্পের ছাউনি দিয়ে সার কথাগুলো বলা হয়, ঠিক তেমন বাস্তব জগৎ ও জীবনের নানা আবহের প্রকাশ ঘটিয়ে গল্প বা উপন্যাসে মূল কাহিনিটি রচিত হয়। মৌ-এর উপন্যাসেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। আমার বিশ্বাস, গ্রন্থটি থেকে ঠিকরানো মানবিক রস আস্বাদনে পাঠক বঞ্চিত হবেন না। আবুল কাইয়ুম মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও অনুবাদক