বাংলাদেশের সমতল ও পাহাড়ি অঞ্চলে ৪৫টির অধিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। 'মানব বসতির যাদুঘর' নামে খ্যাত পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘকাল ধরে ভিন্ন ভাষাভাষী ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মঙ্গোলীয় রক্তধারার মানুষেরা বাস করে আসছে। এঁরা হলো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, রাখাইন, চাক, খিয়াং, খুমী, কুকী, বম, পাঙ্খোয়া ও লুসাই। এঁদের মধ্যে চাকমারাই অগ্রগামী এবং এ দেশে এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। বাংলাদেশ ছাড়াও চাকমারা ভারতের মিজোরাম, ত্রিপুরা ও আসামে চাকমা নামে এবং মিয়ানমারে ভিন্ন নামে পরিচিত। তা হলেও তাঁদের ভাষা-সংস্কৃতি অভিন্ন। চাকমারা মঙ্গোলীয় মানবগোষ্ঠীর কিরাতজাতিভুক্ত শাখা। কোনো কোনো নৃতাত্ত্বিক এঁদেরকে 'লোহিতিক' ও 'তিব্বতীয় ব্রহ্মা' বলে অভিহিত করেছেন। জুমচাষ উৎপাদনের প্রধান অবলম্বন বলে এঁদেরকে 'জুমিয়া'ও বলা হয়। প্রায় এক সহস্র বছর আগে পার্বত্য অঞ্চলে এঁদের আগমন ঘটে বলে কোনো কোনো ইতিহাসবিদ মনে করেন। চাকমাদের অনেকের ধারণা তাঁদের আদি বাসভূমি চম্পকনগর। তবে এই চম্পকনগর কোথায় অবস্থিত তা নিয়ে তাঁদের মধ্যে নানা মতভেদ রয়েছে। চাকমাদের রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি, ভাষা ও বর্ণমালা। কিন্তু ভাষা-চর্চার প্রসার ঘটছে ধীর গতিতে। লক্ষণীয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মঙ্গোলীয় রক্তধারার ১৩টি নৃগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা ও তাঁদের সহোদর নৃগোষ্ঠী তঞ্চঙ্গ্যা বাদে বাকী ১১টি নৃগোষ্ঠীর ভাষা ভোট-ব্রহ্ম শাখাভুক্ত। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষা ইন্দো-ইরানীয় বা আর্যশাখাভুক্ত মিশ্রভাষা। যা চট্টগ্রামের বিকৃত বাংলার অনুরূপ। তৎসত্ত্বেও চাকমাদের লোকসাহিত্যের ভাণ্ডার যেমন সমৃদ্ধ তেমনি তাদের লোকসংস্কৃতিও বর্ণাঢ্য। চাকমারা বর্তমানে বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। তথাপি অরণ্য জনপদের নৃগোষ্ঠী হিসেবে তাঁদের প্রাচীন ধর্ম জড়বাদী [Animist]। মূলত প্রাচীন কাল থেকেই এঁরা জড়োপাসক এবং পর্যায়ক্রমে ব্রাহ্মণ্যবাদী বর্ণ হিন্দুদের স্বার্থ ও প্রভাবে এঁদের মধ্যে বিকৃতভাবে হিন্দুধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটে। এক পর্যায় চাকমাদের প্রভাবশালী রাণী কালিন্দীর আমলে [১৮৪৪-১৮৭৩] তাঁর রাজ-আদেশে রাতারাতি এঁরা বৌদ্ধত্বে ধর্মান্তরিত হন। তৎসত্ত্বেও তাঁদের প্রাচীন জড়বাদী-ধর্ম ও তৎপরবর্তী হিন্দুধর্মের নানা ধর্মীয় আচার-প্রথা তাঁদের ধর্মাচারে থেকে যায়। মূলত চাকমারা মিশ্র-ধর্মাবলম্বী। তাই এখনো তাঁদের মাঝে প্রাচীন জড়োপাসনার নানা প্রথা-পদ্ধতি এবং বর্ণ হিন্দুদের গ্রহণকৃত আর্যপূর্ব ধর্মাচারেরও নানা আচার-প্রথা তাঁদের মাঝে বিরাজমান রয়েছে। অন্যদিকে নানা রকম লোকবিশ্বাস বা অনক্ষর সমাজের বৈশিষ্ট্য তাঁরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে মেনে চলে। এই গ্রন্থে চাকমা জাতির প্রাগৈতিহাসিক কাল, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, অর্থনীতি, ভাষা, পরিবার গঠন, বিবাহ ব্যবস্থা, গৃহায়ন, আচার- আচরণ, অনক্ষর সমাজের বৈশিষ্ট্য, গহনাগাঁটি, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, ধর্ম, উৎসব, নৃত্য-গীত ও লোকসাহিত্য আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের সমতল ও পাহাড়ি অঞ্চলে ৪৫টির অধিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। 'মানব বসতির যাদুঘর' নামে খ্যাত পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘকাল ধরে ভিন্ন ভাষাভাষী ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মঙ্গোলীয় রক্তধারার মানুষেরা বাস করে আসছে। এঁরা হলো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, রাখাইন, চাক, খিয়াং, খুমী, কুকী, বম, পাঙ্খোয়া ও লুসাই। এঁদের মধ্যে চাকমারাই অগ্রগামী এবং এ দেশে এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। বাংলাদেশ ছাড়াও চাকমারা ভারতের মিজোরাম, ত্রিপুরা ও আসামে চাকমা নামে এবং মিয়ানমারে ভিন্ন নামে পরিচিত। তা হলেও তাঁদের ভাষা-সংস্কৃতি অভিন্ন। চাকমারা মঙ্গোলীয় মানবগোষ্ঠীর কিরাতজাতিভুক্ত শাখা। কোনো কোনো নৃতাত্ত্বিক এঁদেরকে 'লোহিতিক' ও 'তিব্বতীয় ব্রহ্মা' বলে অভিহিত করেছেন। জুমচাষ উৎপাদনের প্রধান অবলম্বন বলে এঁদেরকে 'জুমিয়া'ও বলা হয়। প্রায় এক সহস্র বছর আগে পার্বত্য অঞ্চলে এঁদের আগমন ঘটে বলে কোনো কোনো ইতিহাসবিদ মনে করেন। চাকমাদের অনেকের ধারণা তাঁদের আদি বাসভূমি চম্পকনগর। তবে এই চম্পকনগর কোথায় অবস্থিত তা নিয়ে তাঁদের মধ্যে নানা মতভেদ রয়েছে। চাকমাদের রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি, ভাষা ও বর্ণমালা। কিন্তু ভাষা-চর্চার প্রসার ঘটছে ধীর গতিতে। লক্ষণীয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মঙ্গোলীয় রক্তধারার ১৩টি নৃগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা ও তাঁদের সহোদর নৃগোষ্ঠী তঞ্চঙ্গ্যা বাদে বাকী ১১টি নৃগোষ্ঠীর ভাষা ভোট-ব্রহ্ম শাখাভুক্ত। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষা ইন্দো-ইরানীয় বা আর্যশাখাভুক্ত মিশ্রভাষা। যা চট্টগ্রামের বিকৃত বাংলার অনুরূপ। তৎসত্ত্বেও চাকমাদের লোকসাহিত্যের ভাণ্ডার যেমন সমৃদ্ধ তেমনি তাদের লোকসংস্কৃতিও বর্ণাঢ্য। চাকমারা বর্তমানে বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। তথাপি অরণ্য জনপদের নৃগোষ্ঠী হিসেবে তাঁদের প্রাচীন ধর্ম জড়বাদী [Animist]। মূলত প্রাচীন কাল থেকেই এঁরা জড়োপাসক এবং পর্যায়ক্রমে ব্রাহ্মণ্যবাদী বর্ণ হিন্দুদের স্বার্থ ও প্রভাবে এঁদের মধ্যে বিকৃতভাবে হিন্দুধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটে। এক পর্যায় চাকমাদের প্রভাবশালী রাণী কালিন্দীর আমলে [১৮৪৪-১৮৭৩] তাঁর রাজ-আদেশে রাতারাতি এঁরা বৌদ্ধত্বে ধর্মান্তরিত হন। তৎসত্ত্বেও তাঁদের প্রাচীন জড়বাদী-ধর্ম ও তৎপরবর্তী হিন্দুধর্মের নানা ধর্মীয় আচার-প্রথা তাঁদের ধর্মাচারে থেকে যায়। মূলত চাকমারা মিশ্র-ধর্মাবলম্বী। তাই এখনো তাঁদের মাঝে প্রাচীন জড়োপাসনার নানা প্রথা-পদ্ধতি এবং বর্ণ হিন্দুদের গ্রহণকৃত আর্যপূর্ব ধর্মাচারেরও নানা আচার-প্রথা তাঁদের মাঝে বিরাজমান রয়েছে। অন্যদিকে নানা রকম লোকবিশ্বাস বা অনক্ষর সমাজের বৈশিষ্ট্য তাঁরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে মেনে চলে। এই গ্রন্থে চাকমা জাতির প্রাগৈতিহাসিক কাল, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, অর্থনীতি, ভাষা, পরিবার গঠন, বিবাহ ব্যবস্থা, গৃহায়ন, আচার- আচরণ, অনক্ষর সমাজের বৈশিষ্ট্য, গহনাগাঁটি, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, ধর্ম, উৎসব, নৃত্য-গীত ও লোকসাহিত্য আলোচিত হয়েছে।
কবি ও গবেষক মুস্তাফা মজিদ এর রয়েছে ১০টি কাব্যগ্রন্থ। যথাক্রমে- ‘মেঘবতী সুবর্ণভূমি, “তােকে নিয়ে প্রেম প্রেম খেলা, কুসুমিত পঞ্চদশী’, ‘পুষ্পপত্রে নীলকণ্ঠ’, ‘জনযুদ্ধের কনভয়, ‘সাকিন সুবিদখালী’, ‘স্বাতীর কাছে চিঠি’, Diary of a Nepalese Guerrillas সম্পাদিত কবিতাসমগ্র ঃ মাও সেতুঙ এবং নিবেদিত কবিতা সংকলন ‘প্রাণিত রবীন্দ্রনাথ’ । এই কবি কবিতা লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসরত। মঙ্গোলীয় ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে লােক প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র নিয়েও গবেষণা করে আসছেন। বাংলাদেশের রাখাইন জাতিসত্তার আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক সমীক্ষা নিয়ে অভিসন্দর্ভ রচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। যা বাংলাদেশের রাখাইন’ শিরােনামে বাংলা ভাষায় বাংলা। একাডেমী এবং The Rakhaines শিরােনামে ইংরেজি ভাষায়। ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । ড. মুস্তাফা মজিদের এ পর্যন্ত রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা। ৪০ উর্ধ্ব। তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থের মধ্যে ত্রিপুরা জাতি। পরিচয়’, ‘পটুয়াখালীর রাখাইন উপজাতি', আদিবাসী রাখাইন’, ‘মারমা জাতিসত্তা' বাংলাদেশে মঙ্গোলীয়। আদিবাসী’, ‘গারাে জাতিসত্তহজং জাতিসত্তা’, আদিবাসী সংস্কৃতি (১ম ও ২য় খণ্ড), রূপান্তরের দেশকাল’, ‘সমকালের আত্মকথন’, ‘লােক প্রশাসনের তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ’, ‘বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র', 'রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্র’, ‘নেতৃত্বের স্বরূপ’, বাংলাদেশে বঙ্কিমচন্দ্র’, ‘মুক্ত ও মুগ্ধদৃষ্টির রবীন্দ্র বিতর্ক’ । আর ছােটদের জন্য রচিত ও সম্পাদিত গল্প গ্রন্থ। ‘দীপুর স্বপ্নের অরণি’, ‘জীবন থেকে’ ও ‘ছােটদের ৭টি মঞ্চ নাটক’ এবং জীবনী গ্রন্থ ‘রূপকথার নায়ক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন’ ও ‘বঙ্গবীর ওসমানী। মার্কসীয় মুক্ত চিন্তার যৌক্তিক দৃষ্টবাদে অবিচল মুস্তাফা মজিদ কৈশােরে উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে। অংশগ্রহণসহ কৈশাের থেকেই নানা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। জড়িত । বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ছায়ানট, ঢাকা থিয়েটার ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য। এছাড়াও তিনি সত্তর ও আশির দশকে শিশু-কিশাের। সংগঠন গড়া ও নাট্য আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন । পেশায় প্রথমে সাংবাদিকতা এবং পরে ১৯৮৪ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত আছেন। বর্তমানে মহাব্যবস্থাপক ড. মুস্তাফা মজিদ ১৯৫৫ সালের ১৪ই এপ্রিল পটুয়াখালী জেলার সুবিদখালীতে জন্মগ্রহণ করেন । ভ্রমণ করেছেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানী, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ড।