চিত্রশিল্পী, গায়ক, বাদক, অভিনেতা ইত্যাদি নানা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের স্বভাবশিল্পী হিসাবে অভিহিত করা যায় কবি মামুনুল হক টুটুকে। স্কুলজীবন থেকেই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তাঁর স্কুলের খাতা ভরে থাকতো ফুল, পাখি, নৌকা আর বিভিন্ন রকম ছন্দকথায়। তখনকার দিনে পাড়ায় মহল্লায় শিক্ষা সংস্কৃতির একটা মধুর চর্চা ছিল। পাড়ায় মুকুল ফৌজ ছিল, তিনি ছিলেন তাঁর নিয়মিত সদস্য। নাটক ও আবৃত্তিতে অংশ নিতেন। তদানীন্তন পাকিস্তান কাউন্সিল ছিল রাজশাহীতে। সেখানে পরিদর্শক ছিলেন বর্তমান শিশু একাডেমির সাবেক পরিচালক জনাব কিবরিয়া। তাঁর সঙ্গে লেখকের পরিচয় হয় পূর্ব পাকিস্তান শিশু চিত্র প্রদর্শনীতে। এতে অংশ নেন টুটু এবং যথারীতি প্রথম স্থান অধিকার করেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন স্যারের হাত থেকে পুরষ্কার হিসেবে গ্রহণ করেন ‘শিশুতোষ বিশ্বকোষ’ নামে একটি বই। ১৯৭০ সালে রাজশাহী থেকে রাজধানী ঢাকায় আসেন। ভর্তি হন তখনকার চারুকলা ইন্সটিটিউট—এ (ঢাকা আর্ট কলেজ)। বছরখানেক যেতেই শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। কলেজ ছেড়ে চলে গেলেন দেশের বাড়ি রাজশাহীতে। তারপর বর্ডার পার হয়ে ভারত। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের সহযোগিতায় যুদ্ধ ট্রেনিংয়ের জন্য ভারতীয় মিলিটারি একাডেমি, দেরাদুন, তান্ডুয়া ক্যাম্প—এ অবস্থান করেন। এক মাস ট্রেনিং—এর পর দেশের পারিলা বর্ডার হয়ে প্রবেশ করে নওঁগা, পোরশা, চারঘাট এসব জায়গায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। যুদ্ধ শেষে আবার আর্ট কলেজে ফিরে এলেন। চিত্র, নৃত্য, গীত, বাদ্য রসনায় ভরপুর ছিল তখনকার আর্ট কলেজ। বসবাস ছিল কলেজের শহীদ শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসের ১০ নং কক্ষে, ছবি অঁাকা, নাচ—গান করে মাতিয়ে রাখতেন সমস্ত হোস্টেল। এই চিত্র বাদ্য গীত মাধুর্যে মোহিত হতেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি সাবদার সিদ্দিকীসহ আরো অনেক কবি সাহিত্যিক। তখনকার কবি সাহিত্যিকরাই ছিল কবি মামুনুল হকের মূল অনুপ্রেরণা। পরবর্তী সময়ে গান শেখার উদ্দেশ্যে ভর্তি হলেন ছায়ানটে। তখন ছায়ানট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলে। ভর্তির সময় তাঁর গান শুনে পরীক্ষক অঞ্জলী’দি বলেছিলেন, তুমি সরাসরি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হয়ে যাও। তিনি ভর্তি হলেন এবং পাঁচবছরের কোর্সে মাত্র সাড়ে তিনবছর ছিলেন। প্রিয় বন্ধু নায়ক চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেনের হাত ধরে ডি আই টি টিভি সেন্টারে প্রথম গানের অনুষ্ঠানে যান। নাটকে প্রথম অভিনয় ‘বিদায় মোনালিসা’য় টি.এস.সি মঞ্চে। আল মনসুর ছিলেন পরিচালক। সঙ্গে ছিলেন শিমুল বিল্লাহ, তিনিও তখন আর্ট কলেজের ছাত্রী। মামুনুল হক টুটুর বিনোদন গুরু ‘ইত্যাদি’ খ্যাত হানিফ সংকেত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক। বড় কন্যা ডালিয়া হক কানাডা প্রবাসী। ছোট কন্যা জিনিয়া হক লে. কর্নেল হিসাবে সেনাবাহিনীতে কর্মরত। গৃহলক্ষী হাফিজা মামুন বুলবুলকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার।