নিশুতি রাতের গহীন বনের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন শিকারী। আচমকা এক ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসতে থাকে তার দিকে। তিনি টর্চের সুইচের চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠলো ভয়ানক এক মুখচ্ছবি। এটা কি মানুষ? নাকি দানব? জীবনে প্রথমবারের মতো সাহস হারালেন দুঃসাহসী শিকারি। সমুদ্র সমতট থেকে ২০০০ ফুট উঁচুতে এক নির্জন পাহাড়ি গ্রামে এসে হাজির হলো রোমাঞ্চপ্রেমী যুবক। খুবই বিস্ময়ে অনুভব করে, জায়গাটা অন্যরকম, মেয়েদের উর্ধাঙ্গে কোন কাপড় নেই। বনচারী লাজুক প্রাণীরা যেভাবে হঠাৎ মানুষ দেখলে তাকায়, ঠিক সেভাবে ওরা তাকিয়ে ছিল তার দিকে: অজানা শিহরণে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল তার। মেঘলা রাতে মাছ টর্চ আর ট্যাটাহাতে নির্জন জলাভূমিতে মাছ শিকারে যায় গ্রামের সাহসী যুবক গোলজার। বড় আকারের একটা শোল মাছকে ট্যাটা দিয়ে আঘাত করে চেপে ধরে জলের নিচে। রক্তে রক্তে লাল হয়ে উঠে পানি। মাছের শরীরে এত রক্ত দেখে ঘাবড়ে যায় সে। এরপর বাঁশের হাতল ধরে টান দিতেই উঠে আসে ট্যাটাবিদ্ধ মানব শিশুর দেহ। এই অতি ভয়ংকর দৃশ্যে আতঙ্কে কেঁপে উঠে দুঃসাহসী গোলজারের মন। খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন শিকারি। বিন্দু বিন্দু শিশির কনা ঝরে ভিজে যাচ্ছে তার চামড়ার জ্যাকেট আর টুপি। হাতে রাখা বন্দুকটাকে মনে হচ্ছে লম্বা এক টুকরো বরফ। চাঁদ চলে এসেছে ঠিক মাথার উপর। গ্রামের দিক থেকে একটু পর পর ভেসে আসছে শেয়ালের ডাক। হঠাৎ এক সময় তাকে চমকৃত করে দিয়ে ধ্বনিত হলো প্রেতের চিৎকার। একে একে অবশ হয়ে যেতে লাগলো দেহের সমস্ত স্নায়ু। এ ধরনের কিছু ঘটনা সহ আরো কিছু কাহিনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে “আজড়” গ্রন্থটিতে। বন, পাহাড়, জঙ্গল আর গ্রামীণ পটভূমিতে রচিত আজড় গ্রন্থটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এগুলো মোটেও কাল্পনিক কোন ঘটনা নয়। তাই গ্রন্থটি পাঠ করতে গিয়ে কখনো কখনো পাঠক/পাঠিকার কাছে মনে হবে, জীবন আসলে গল্পের চাইতেও বৈচিত্র্যময়।