ছয় বছর বয়সী কন্যাকে নিজের শৈশব দেখানোর জন্য একটা সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করেন মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। বাল্যবন্ধুর লেখা গল্প, একদল অপেশাদার অভিনেতা, মামুলি যন্ত্রপাতি আর আনাড়ি একটা কারিগরি দল নিয়ে কাজেও নেমে পড়েন। শুরুটা হয় নিজেদের ফিল্ম ব্যান্ড ‘সিনেমাকার’এর চার মাসের ওয়ার্ম আপ প্রোজেক্ট হিসাবে। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে পেত লেগে যায় সাড়ে সাত বছর। এই দীর্ঘ সময়ে বারবার যেমন নানান বাঁধা বিপত্তির সামনে পড়তে হয়েছে আবার সমাধানের নতুন নতুন পথও বের হয়ে গেছে। মুক্তির পর দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয় ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’, অর্জন করে একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার। একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতার চলার পথ খুব মসৃণ নয়। স্রেফ মনের জোর আর অধ্যবসায়কে সম্বল করে হাতে যা আছে তা নিয়েই চলচ্চিত্রের মতো একটি ব্যয় সাপেক্ষ আর কারিগরি শিল্প মাধ্যমে পাড়ি জমানো সহজসাধ্য হওয়ার কোন কারণও নেই। তবে পথে নামলেই পথ পাওয়া যায়। জার্নাল আকারে লেখা নির্মাতার এই সাড়ে সাত বছরের অভিজ্ঞতায় এটা পরিষ্কার। ভূমিকা: কাজ শিখে মাঠে নামার চেয়ে বরং কাজ করতে করতেই আমি শিখতে পছন্দ করি। নিজের ভুলগুলো নিজেই সংশোধন করতে ভালো লাগে। সমস্যা সমাধানের জন্য কোন দেবদূতের অপেক্ষা না করে নিজের সামর্থ্যের ওপর ভরসা রাখি। আর কোন প্রত্যাশা ছাড়া স্রেফ কাজের আনন্দেই নিজের কাজটা করে যেতে চাই। কেবল এই বোধগুলোকে পুঁজি করেই চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো খুবই কারিগরি আর খরচান্ত একটা শিল্প মাধ্যমে পা রাখা। অবধারিতভাবেই একের পর এক বাধা বিপত্তির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। মাঝে মাঝেই হাল ছেড়ে দেওয়ার পর্যায়েও চলে যাই। কিন্তু শেষটা দেখার লোভ সামলাতে পারি না। আবার কাজে নেমে পড়ি। কীভাবে যেন সমাধানের পথও বের হয়ে যায় এক এক করে। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ছয় বছর বয়সী কন্যা রাইনাকে আমার নিজের শৈশব দেখানোর চিন্তা থেকেই একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করি। নিজেদের ফিল্ম ব্যান্ড ‘সিনেমাকার’এর জন্য চার মাসের ওয়ার্ম আপ প্রোজেক্ট হিসাবে বাল্যবন্ধু শরীফ উদ্দিন সবুজের ছোট গল্প ‘মইন্না ভাই বল্লা রাশি’, একদল অপেশাদার অভিনেতা, মামুলি যন্ত্রপাতি আর আনাড়ি একটা কারিগরি দল সম্বল করে কাজেও নেমে পড়ি। কিন্তু নানান ঘটনা-দুর্ঘটনায় কাজটা শেষ হতে হতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড়ায়। সেই বছরই নভেম্বরে ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’র আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার হয় ইন্দোনেশিয়ায়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ঘুরে দেশের প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটা আসতে আসতে লেগে যায় ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত। একটা সিনেমা বানাতে এত দীর্ঘ সময় কেন লাগল সেই বৃত্তান্ত জানতে চান অনেকেই। এক কথায় উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় না। এক সময় মনে হয় ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’ নিয়ে সাড়ে সাত বছরের এই জার্নিটা লিখে ফেলা দরকার। অন্যদের জন্য না যতটা তার চেয়ে বেশি নিজের জন্য। নানান চড়াই উৎরাই পেরুনোর এই ইতিবৃত্ত ডায়েরির আঙ্গিকে লিখতেও শুরু করি। পরবর্তীতে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার ব্যক্তিগত মোটিভিশন হিসাবেই লিখতে থাকি।