এ বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ে টাকা তৈরির যে গোপন কথা বলা হয়েছে তা পাঁচ শতাধিকেরও বেশি মানুষকে ধনবান করেছে। এ মানুষগুলোকে আমি অনেক সময় ধরে নজরে রাখছি। এ সিক্রেটটি আমার মনোযোগ কেড়ে নেয় এন্ড্রু কার্নেগি দ্বারা, সিকি শতাব্দীরও আগে প্রিয়দর্শন বুড়ো স্কটম্যানটি আমার মাথায় অজান্তেই প্রবেশ করে যান, তখন আমি একজন বালক মাত্র। তিনি তখন তার চেয়ারে বসে ছিলেন, চোখ চমকাচ্ছিল, আমাকে সতর্কভাবে লক্ষ্য করছিলেন দেখতে যে তিনি আমাকে যা বলেছেন তার গুরুত্ব বোঝবার মতো যথেষ্ট ব্রেন আমার রয়েছে কী না? এন্ড্রু কার্নেগি যখন দেখলেন আমি তার আইডিয়াটি বুঝতে পেরেছি, জানতে চাইলেন ২০ বছর অথবা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে আমি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারব কী না সেই জগত এবং সেই পুরুষদের মাঝে প্রবেশ করার জন্য, যারা কোনোরকম সিক্রেট ছাড়াই ব্যর্থতার মাঝ দিয়ে চালিত করেছেন জীবন। আমি বললাম আমি পারব এবং মিস্টার কার্নেগির সহায়তায় আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলাম । এ বইতে সেই সিক্রেট বা গোপনীয়তার কথা রয়েছে যেখানে সহস্রাধিক মানুষের প্রাকটিক্যাল টেস্ট গ্রহণ করা হয়েছে, জীবনের প্রতিটি দিক ছুঁয়ে দেখা হয়েছে। এটি ছিল মিস্টার কার্নেগির আইডিয়া, সেই ম্যাজিক ফর্মুলা যা তাকে অপরিসীম ধনসম্পদ দিয়েছে, তিনি সেইসব লোকের কাছাকাছি গেছেন যাদের অনুসন্ধান করার সময় নেই যে লোকে কীভাবে অর্থ বানায়, এবং তার আশা এ ফর্মুলার গভীরতা বা সম্পূর্ণতা হাতে-কলমে দেখিয়ে দিতে পারব । এ বইতে বিশ্বাস নিয়ে যে অধ্যায়টি আছে তাতে আপনি পাঠ করবেন বিখ্যাত ইউনাইটেড স্টেট্স স্টিল করপোরেশনের আশ্চর্য কাহিনী। মিস্টার কার্নেগির ফর্মুলা অনুসরণ করেছে বলে প্রতিষ্ঠানটি দানবীয় রূপ ধারণ করে। এক তরুণ তার এ ফর্মুলায় বিশ্বাস করেছিলেন। তার নাম চার্লস এম. শোয়াব। কার্নেগির ফর্মুলা অনুসরণ করে তিনি বিশাল ধনসম্পদের মালিক হন। এবং তার সম্পত্তির মূল্য ৬০০ মিলিয়ন ডলার।
আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করা অলিভার নেপোলিয়ন হিল আত্মোন্নয়নধর্মী রচনা লেখকদের মাঝে প্রথমদিককার একজন। ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও সফলতা লাভের বিভিন্ন দিক লেখনীতে তুলে এনে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সফল আত্মোন্নয়নমূলক লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে হিলের। নেপোলিয়ন হিলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সাউথইস্ট ভার্জিনিয়ায় ২৬ অক্টোবর, ১৮৮৩ সালে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শেষ পর্যন্ত ল'স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। এর আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সাথে, সেই ১৩ বছর বয়স থেকে। ১৯০৮ সালে এন্ড্রু কার্নেগীর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে হিলের জীবনে আসে বিশাল পালাবদল। তখনকার সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি কার্নেগী তাকে পরামর্শ দেন ধনী ও সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে ও তাদের সাফল্যের সূত্র সম্পর্কে জানতে। এরপর তিনি বিশ্ববিখ্যাত সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন। এই তালিকায় আছেন হেনরি ফোর্ড, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলসহ আরো অনেকে। এমন ৪৫টি সাক্ষাৎকারের লব্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম রচনা 'দ্য ল অব সাকসেস'। এই বইয়ে তিনি সাফল্যের সূত্রকে ব্যখ্যা করেছেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, পুঁজিবাদের সমন্বয়ে মূর্ত দর্শন দিয়ে। নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ সাফল্যগাঁথার চেয়ে সাফল্যের পেছনের সূত্র সহজীকরণের পাথেয় হিসেবে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিখ্যাত এই লেখকের চরিত্রের কিছু রহস্যময় বৈশিষ্ট্য মানুষকে ভাবিয়েছেও বটে। তিনি দাবি করতেন, আত্মাদের সাথে তাঁর যোগাযোগ আছে, তাঁকে দেয় আধ্যাত্মিক জ্ঞান, সাফল্যের মন্ত্র। হিল এই বিষয়টি তাঁর ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত বই 'গ্রো রিচ(!) উইথ পিস অব মাইন্ড' এ খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছেন। বর্তমানে তাঁর জীবনের অজানা কিছু অধ্যায় উঠে এসেছে গবেষকদের চোখে। তবে নেপোলিয়ন হিল এর বই সমগ্র বিতর্কিত ব্যক্তিজীবনের প্রভাবেও জনপ্রিয়তা হারায়নি। তাঁর রচিত 'থিংক এন্ড গ্রো রিচ' সর্বকালের সেরা আত্মোন্নয়নমূলক দশটি বই এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ হলো 'অ্যাটিটিউড মেন্টাল পজিটিভা', 'দ্য মাস্টার কি টু রিচেস', 'সাকসেস হ্যাবিটস' ইত্যাদি। বিতর্কিত চরিত্রের এই লেখক ১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বেশ রহস্যজনকভাবে মারা যান। ধারণা করা হয়, তিনি পারকিনসন্স সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন।