ছোটবেলায় স্কুলে অথবা খেলার মাঠে যখন কোন নতুন বন্ধুগ্রুপের সাথে আমাদের আলাপ পরিচয়ের পর্ব হতো, তখন পুরানো বন্ধুরা নতুন বন্ধুদের বলতো, ও হচ্ছে ফওজিয়া খানের মেয়ে অথবা ও হচ্ছে ফওজিয়া খানের ছেলে। তখন আমাদের মা ফওজিয়া খান নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। শিল্পীজীবনের একটা দীর্ঘ সময় তিনি এই নামেই গান করেছেন। যদিও কাগজে কলমে তাঁর নাম ফওজিয়া ইয়াসমীন। তখন রেডিও ছিল একটা, টিভি চ্যানেল ছিল একটা। রেডিও শোনার অভ্যাস অনেকেরই ছিল। আর টিভি ছিল রীতিমত একটা আকর্ষনীয় বিষয়। প্রত্যেক বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ সন্ধ্যাবেলায় বিটিভির অনুষ্ঠান দেখতো। এসব কারণে আমাদের মা ছিলেন খুব পরিচিত একটা নাম এবং খুব পরিচিত একটা মুখ। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি মা খুব মিশুক স্বভাবের। ছেলেমেয়েকে নিয়ে গল্প করতে খুব পছন্দ করতেন। এভাবে আমার কাছে আর আমার ছোট ভাই রূপক (এই বইয়ের লেখক তারিফ হায়াত খান)-এর কাছে একের পর এক জীবনের সর গল্প বলে গেছেন। আমি শুধু শ্রোতা হয়ে শুনে গেছি। অন্য কোন বুদ্ধি আমার মাথায় আসেনি। কিন্তু রূপক অত্যন্ত বুদ্ধিমানের মত মায়ের জীবনের গল্পগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে বই লিখে ফেললো। আমি ওকে তাগাদা দিলাম এবারের বইমেলায় বইটা প্রকাশ করতে। কারণ "মেঘদূত" রয়েছে এখন আমাদের সাথে। শিল্প সংস্কৃতির সব ধরণের ইতিবাচক কর্মকান্ডে "মেঘদূত" এখন আমাদের আশার আলো। বই প্রকাশের পরিকল্পনা হঠাৎ করেই আমার মাথায় এসেছে। আরো আগে পরিকল্পনা করলে কাজ আরো সহজ হতো। তাছাড়া রূপক প্রবাসী বলেও এক ধরণের কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়েছে এবং সেটা কাটিয়ে উঠবার জন্য আমাদের বেশ খাটুনি করতে হয়েছে। শেষের দিকে খুব কম সময়ে অনেক কাজ করতে গিয়ে বেশ ধকল পোহাতে হয়েছে। এসব পেরিয়ে বইখানা এবার আলোর মুখ দেখতে চলেছে। এতে আমি যার পর নাই আনন্দিত বোধ করছি। রূপকের জন্য শুভকামনা। পেশায় স্থপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রূপকের ইতোপূর্বে গবেষণামূলক বই প্রকাশিত হলেও এ ধরণের বই এটাই প্রথম। সেজন্য সে নিজেও উল্লসিত। এই বইয়ের মাধ্যমে আমাদের মা হয়তো বা নতুন করে কারো কারো প্রেরণার উৎস হয়ে উঠতে পারেন। তাঁর সুস্থ সুন্দর দীর্ঘ জীবনের জন্য সবার দোয়া কামনা করছি। আর বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি। "মেঘদূত"কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।