দীলতাজ রহমানের উপন্যাস ‘ মৌরিন’এর সারকথা। মা-বাবার একটিমাত্র ছেলে বিদেশে লেখাপড়া করতে যায়। বছর দুয়েক সে সেখানে থাকতেই শোনে তার মা মারা গেছেন। পরে মায়ের দিকের আত্মীয়দের মাধ্যমে জানতে পারে তার বাবা আবার বিয়ে করেছেন। সে খুব রুষ্ট হয়ে যায় এই ঘটনায়। সে প্রতিজ্ঞা করে সে আর দেশে আসবে না। কিন্তু কিছুদিন পর আবার শোনে তার বাবাও মারা গেছেন। তারপর সে শোকে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তার জন্য লাশ দাফন করা হয়নি। সে এলে দাফন হবে। সে আসার পরপরই তার মায়ের দিকের আত্মীয়-স্বজনেরা তাকে পরামর্শ দিতে থাকে, তার বাবার বিয়ে করা সে যুবতী স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার। লাশ দাফন করে এসে মায়ের দিকের সবাই যখন উঠেপড়ে লাগে, একরোখা তরুণটির হঠাৎই ঔচিত্যবোধ জেগে ওঠে। সে বোঝে এ বাড়িতে ওই নারীর অধিকার আছে। সে তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী’র ব্যক্তিত্বে তার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে এবং একসময় সে জানতে পারে, সে নিজেই ওই বাবার ঔরসজাত সন্তান ছিল না। সে যাদেরকে মা-বাবা হিসাবে জানত, তারা নিঃসন্তান থাকায় এক কুমারী মাতার সদ্য জন্মানো শিশুটিকে কেউ তাদের কোলে তুলে দেয়। হঠাৎ শোনা এই এই বার্তা তাকে আমূল নাড়িয়ে দেয়। সে ঘোরগ্রস্ত হয়ে পড়ে এরই ভেতর সে দিশা পায়, বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতি আবিষ্টতাকে সে প্রেম ও পরিণতির দিকে এগিয়ে নিতে কোনো বাঁধা ভেতর থেকে টের পায় না।
দীলতাজ রহমানের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গােপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে। মা রাহিলা বেগম, বাবা সূফী ভূইয়া মােহাম্মদ জহুরুল হক। ব্যক্তিগত জীবনে দীলতাজ রহমান আশিক, ফারহানা, ফারজানা , আরিফ- চার সন্তানের জননী। আর এদের বাবা এ.কে ফজলুর রহমান ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার। ফেনী জেলার সােনাগাজী থানাধীন ধলিয়া মৌলবিবাড়ির বউ দীলতাজ রহমানের শ্বশুর ডাক্তার তফাজ্জল আহম্মদ। শাশুড়ি একই বাড়ির বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মৌলবি আবুল বাসার ওসমান। গণির কন্যা করিমননেসা। দীলতাজ রহমান বিট মাস্কট প্রাইভেট লিমিটেড-এর (সফটওয়্যার ফার্ম) চেয়ারম্যান। কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও, ক্রমে পাঠকমহলে দীলতাজ রহমানের গল্পই ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। গল্প নির্মাণে যে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার পরিচয় তিনি দেন, প্রতিটি গল্পের সাথে জীবনের যে ঘনিষ্ঠতা তিনি ফুটিয়ে তােলেন, তাতে শুধু। ভালােলাগা নয়, পাঠককে অবাক করেও ছাড়েন।