...বাঙালি আজ বাংলা মায়ের কোল ছেড়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে স্বনামে, সুনামে, স্বকাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। সে আজ বিশ^নাগরিক। শত শত ইব্রাহীম চৌধুরী আজ দেশে দেশে বাংলা মায়ের পক্ষে গল্প রচনা করে চলেছেন। সেই রচনায় যেমন আছে স্মৃতিকাতরতা, তেমনি আছে দুঃখবিলাস। আর আছে আনন্দের, গর্বের, সাফল্যের দৃপ্ত ঘোষণা। ভাবুক বাঙালি থেকে কর্মঠ প্রবাসীর গুণগান পণ্ডিত রবিশঙ্করের সেতারে, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর সরোদে সুর হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। ব্যক্তিগত জীবনে ইব্রাহীম চৌধুরী বেশ ডাকাবুকো মানুষ। সিলেটের গোলাপগঞ্জে বাঙালির আবহমান মিশ্র সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠা; সেই আশির দশকে ছাত্রজীবনে বামধারার রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, সাংবাদিকতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ, সর্বোপরি মানুষের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস তাঁর মনন তৈরিতে সাহায্য করেছে। যে কারণে পুঁজিবাদের মৃগয়াভূমিতেও তিনি স্বচ্ছন্দে বলতে পারেন: ‘আমাদের যৌবন ব্যর্থ বিদ্রোহের, প্রেমহীন ক্ষুব্ধতার। যে যৌবন পায়নি কিছুই, হয়েছে প্রবঞ্চিত।’ এই আত্মপ্রবঞ্চনা, না পাওয়ার ব্যথাÑসবটাই আদর্শগত ও আত্মগত, যার প্রধান উৎস একটি শিশুতোষ মন। যে মন মানুষের জন্য ভাবে, মানুষের জন্য কাঁদে। এই বইয়ে সংকলিত লেখাগুলো বিভিন্ন সময়ে নানা মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাই বলে এর গুরুত্ব বা পাঠমর্যাদা কিছুমাত্র ক্ষুণ্ন হয়নি। লেখার বিষয়াবলিতে স্বাভাবিকভাবে সিলেট অঞ্চলের প্রভাব আছে। একই সঙ্গে বৃহত্তর বাংলাদেশ সেখানে মূর্ত হয়ে আছে স্বমহিমায়। রবীন্দ্রনাথ যাঁদের ‘গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া করে’ দিতে বলেছিলেন, তাঁরা অনেকেই দেদীপ্যমান হয়ে আছেন। তাঁদেরকে কুর্নিশ।
ইব্রাহীম চৌধুরী। জন্মেছেন বাংলাদেশের সিলেটে, ষাটের দশকে কৈশোর-তারুণ্যের দিনগুলো কেটেছে সেখানেই; পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন আইনশাস্ত্র; যুক্ত হয়েছেন ছাত্র-রাজনীতির সঙ্গে। তারুণ্যের দিনগুলোতে সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রগতিশীল ধারায় সাংগঠকসত্তা নিয়ে জড়িয়ে থেকেছেন উৎসাহের সঙ্গে। সিলেট বারে আইনজীবীর সনদ নিয়েছেন; সে পেশায় সাফল্যের হাতছানি থাকলেও তাতে নিবিষ্ট থাকেন নি। যৌবনে কবিতাও ধরেছিল তাঁকে রাখতে পারেনি। কিন্তু বলতে গেলে সাংবাদিকতাতেই কেটেছে কর্মজীবনের পুরোটা সময়। বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন আশির দশক থেকে। এমনকি বছর বিশেক আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হলেও সে যোগ ছিন্ন হতে পারে নি। সেখানে জীবিকা অন্য হলেও সাংবাদিকতাতেই রয়েছে তাঁর জীবন বাঁধা। বাংলাদেশের নতুন ধারার দৈনিক খবরের কাগজের সূচনাকালে আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজ হয়ে জন্মলগ্ন থেকে হাল আমল অবধি জড়িয়ে ছিলেন প্রথম আলো'র সঙ্গে। বর্তমানে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশমান সাপ্তাহিক প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা'র সম্পাদক। স্ত্রীপুত্রকন্যাসহ বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি রাজ্যের নিউ ব্রান্সউইকে ।