প্রাচ্যতত্তের আলোচনায় এডওর্য়াড সাঈদ বরাবরই প্রাসঙ্গিক। সাঈদের একটি অনন্য কীর্তি হলো-তিনি ওরিয়েন্টালিজমকে একটি গুরুগম্ভীর জনপ্রিয় বিষয় হিসেবে এবং পশ্চিমি বিদ্যায়তনিক প্রকল্পের ভাষায় হাজির করতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য সাঈদ অবশ্যই কৃতিত্ব ও কৃতজ্ঞতার দাবিদার। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, প্রাচ্যতত্ত্ব নামক পশ্চিমি প্রকল্পের রূপ ও পরিচয় তুলে ধরার বিষয়টি সাঈদের একক সৃজন ও নির্মাণ। এরূপ সরলীকরণে বিস্তর ঘাপলা আছে বৈ কী। এভাবে বলার দ্বারা সাঈদের পূর্বাচার্য আরব মনীষীদের সংগ্রাম ও সাধনার সাথে অবিচার করা হয় বৈ কী। সাঈদের বহু বছর আগে আরব চিন্তাবিদগণ ইসতিশরাক বা প্রাচ্যতত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। তাদের কাজের ধরন যদিও কিছুটা সরলরৈখিক। যা কি-না আমজনতার বোধ-বিচারের অনেকটা কাছাকাছি। তাই সাঈদের বয়ানের আলোকে তাদের চর্চাকে পরখ করা নিতান্তই অশাস্ত্রীয় কাজ। বাংলার জ্ঞানমুলুকে প্রাচ্যতত্তের পরিচয় সাঈদের ভাষার তৈরি। তার বরাতেই এই অঞ্চলে প্রাচ্যতত্ত্ব বিষয়ক প্রধান প্রধান পাঠগুলো নির্মাণ হয়। একারণে অনেকে সাঈদের ‘প্রাচ্যতত্তের বাইরে এসে চিন্তা করতে নারাজ। এমনকি সাঈদের ‘প্রাচ্যতত্ত্ব দিয়ে তার পূর্বেকার আরব ও অনারব চিন্তাবিদদের কাজকে নাকচ করতে উদ্যত হন। এটা মূলত প্রাচ্যতত্তের ইতিহাসকে খন্ডিতভাবে দেখার ফল। প্রাচ্যতত্ত্ব কে শিকড়হীনভাবে জানার ফল। এতে করে প্রাচ্যতত্ত্ব বিষয়টি খত্ব ও খর্বত্ব পায় কী না সেটা বিতর্কযোগ্য বিষয় হলেও প্রাচ্যতত্তের পর্যালোচনার ইতিহাসকে ব্যাপকভাবে খন্ডিত করা হয় বৈ কী। উপরন্তু আরব মনীষীদের প্রাচ্যতত্ত্ব বিষয়ক চর্চাকে উপেক্ষা করার অপূরণীয় ক্ষতি ও অবনতির মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। কারণ পরম্পরাহীনভাবে কোনো ইতিহাস রচনা করা সম্ভবপর নয়। অধিকন্তু পরম্পরাকে বাহন করেই কেবল জ্ঞান এগুতে পারে। তাই বলা যায় বাংলার জ্ঞানমুলুকে আরব চিন্তাবিদদের প্রাচ্যতত্ত্ব বিষয়ক চর্চাকে হাজির করার বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। পরিশেষে গ্রন্থিক প্রকাশন-এর কর্ণধার রাজ্জাক রুবেল ও শ্রদ্ধেয় পুলিন বকশীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বইটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। তাদের জন্য শুভকামনা রইল।