জীবন ছিল খুবই সংকীর্ণ যখন কোন পশ্চিমা শহরের সাথে তুলনা করা হয়। যেখানে জীবনের প্রত্যাশা খুব ছোট ছিল উচ্চাকাক্সক্ষার দামে। অপর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে বহু ভার্জিলিয়াবাসি রোগে ভুগতো। দশ বছর বয়সে যখন বড় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি অর্জনের জন্য সামান্য প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখন মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে মারা যায় তার মা। পরের বছর বাবা বিয়ে করলেন, আর সেটাই ছিল কিশোর হিলের জীবনের টানিং পয়েন্ট। নেপোলিয়ানের সৎমা মার্থা র্যামেই ব্রানার ছিলেন একজন শিক্ষিত মহিলা, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিধবা স্ত্রী এবং ডাক্তারের মেয়ে। নতুন মা হিলের মধ্যে নতুন সম্ভাবনা দেখতে পেল, যেটা অন্য কেউ কখনও খেয়াল করেনি। তিনি এক টাইপ রাইটারের হয়ে বন্দুকের ব্যবসা করতে হিলকে রাজি করান এবং কিভাবে বন্দুক চালাতে হয় তার প্রশিক্ষণও দিলেন। পনেরো বছর বয়সে টাইপ রাইটার তাকে দিয়ে খবর টাইপিং করাতো আর এটা তার জন্য একটা মূল্যবান সক্ষমতা হিসেবে ধরা দিল। পুরো রাজ্যের প্রধান কয়েকটা শহর ছাড়া বাকি সবখানের স্কুলগুলোর অবস্থা ছিল জরাজীর্ণ। পাহাড়ি অঞ্চলের প্রাথমিক স্কুলগুলো বছরে মাত্র চারমাস খোলা থাকতো আর সেখানে উপস্থিতি নিয়ে কোনোরূপ জবাবদিহিও করতে হতো না। উচ্চ বিদ্যালয় ও ছিল খুবই কম। পুরো রাজ্যে মাত্র একশটার মতো ছিল উচ্চ বিদ্যালয় যেগুলোর বেশিরভাগেই আবার দুই-তিন বছরের শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। হিলের জন্মের বিশ বছর পরেও পুরো ভার্জিনিয়াতে মাত্র দশটা চার-বছরের শিক্ষা ব্যবস্থাওয়ালা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল। ঐ পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে সাফল্য অর্জন করা, এবং পুরো পৃথিবী জুড়ে কযেক লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করা, অনুপ্রাণিত করা সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার।
আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করা অলিভার নেপোলিয়ন হিল আত্মোন্নয়নধর্মী রচনা লেখকদের মাঝে প্রথমদিককার একজন। ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও সফলতা লাভের বিভিন্ন দিক লেখনীতে তুলে এনে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সফল আত্মোন্নয়নমূলক লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে হিলের। নেপোলিয়ন হিলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সাউথইস্ট ভার্জিনিয়ায় ২৬ অক্টোবর, ১৮৮৩ সালে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শেষ পর্যন্ত ল'স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। এর আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সাথে, সেই ১৩ বছর বয়স থেকে। ১৯০৮ সালে এন্ড্রু কার্নেগীর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে হিলের জীবনে আসে বিশাল পালাবদল। তখনকার সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি কার্নেগী তাকে পরামর্শ দেন ধনী ও সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে ও তাদের সাফল্যের সূত্র সম্পর্কে জানতে। এরপর তিনি বিশ্ববিখ্যাত সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন। এই তালিকায় আছেন হেনরি ফোর্ড, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলসহ আরো অনেকে। এমন ৪৫টি সাক্ষাৎকারের লব্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম রচনা 'দ্য ল অব সাকসেস'। এই বইয়ে তিনি সাফল্যের সূত্রকে ব্যখ্যা করেছেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, পুঁজিবাদের সমন্বয়ে মূর্ত দর্শন দিয়ে। নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ সাফল্যগাঁথার চেয়ে সাফল্যের পেছনের সূত্র সহজীকরণের পাথেয় হিসেবে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিখ্যাত এই লেখকের চরিত্রের কিছু রহস্যময় বৈশিষ্ট্য মানুষকে ভাবিয়েছেও বটে। তিনি দাবি করতেন, আত্মাদের সাথে তাঁর যোগাযোগ আছে, তাঁকে দেয় আধ্যাত্মিক জ্ঞান, সাফল্যের মন্ত্র। হিল এই বিষয়টি তাঁর ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত বই 'গ্রো রিচ(!) উইথ পিস অব মাইন্ড' এ খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছেন। বর্তমানে তাঁর জীবনের অজানা কিছু অধ্যায় উঠে এসেছে গবেষকদের চোখে। তবে নেপোলিয়ন হিল এর বই সমগ্র বিতর্কিত ব্যক্তিজীবনের প্রভাবেও জনপ্রিয়তা হারায়নি। তাঁর রচিত 'থিংক এন্ড গ্রো রিচ' সর্বকালের সেরা আত্মোন্নয়নমূলক দশটি বই এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ হলো 'অ্যাটিটিউড মেন্টাল পজিটিভা', 'দ্য মাস্টার কি টু রিচেস', 'সাকসেস হ্যাবিটস' ইত্যাদি। বিতর্কিত চরিত্রের এই লেখক ১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বেশ রহস্যজনকভাবে মারা যান। ধারণা করা হয়, তিনি পারকিনসন্স সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন।