যে ধরনের সমস্যা নিয়ে তাঁরা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন সে ধরনের সমস্যা প্রায় সকলেরই পরিচিত। এখানে এর কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হলো। তাঁরা বলেছেন, * আমার জীবনে অবিশ্বাস্য পেশাগত সাফল্য এসেছে। আমার লক্ষ্য সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট। কিন্তু এই সাফল্যের বিনিময়ে আমি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন হারিয়েছি। আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা আমার কাছে অপরিচিত হয়ে উঠেছে। নিজেকে চিনি কি না এ বিষয়েও আমি সন্দিহান। আমার কাছে কোন জিনিসটা মূল্যবান তা কি আমি বুঝতে পারি? যা পেয়েছি তা আমার প্রয়োজন ছিল কি নাÑএ প্রশ্ন নিজেকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে। * গত এক বছরে আমি পাঁচবার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছি। আমি ওজন কমাতে চাই। এর জন্য কী কী করতে হবে তাও আমার জানা আছে। ওজন কমাতে পারবো এ বিশ্বাস আমার ছিল। কিন্তু আসলে পারিনি। কয়েক সপ্তাহ পরেই সব ভেস্তে গেছে। আমার সমস্যা হলো, আমি নিজের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করি তা ধরে রাখতে পারি না। * ব্যবস্থাপনার সাফল্যবিষয়ক অনেকগুলো কোর্সে আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কর্মচারীদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু আশা করি। তাদের কাছে বন্ধুর মতো হয়ে উঠতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। তাদেরকে কাজ শেখাতে চাই। কিন্তু আমার প্রতি তাদের সামান্যতম আনুগত্য আছে বলে মনে হয় না। আমার ধারণা, আমি যদি একদিন অসুস্থ হয়ে বাসায় পড়ে থাকি তবে তারা সেদিন কোনো কাজ না করে গল্প করে কাটিয়ে দিবে। আমার প্রশ্ন, আমি তাদেরকে দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলতে পারি না কেন? শুধু কি তাই? আমি এমন একজন স্বাবলম্বী ও দায়িত্বশীল লোকও দেখি না যাকে নতুনভাবে নিয়োগ দিতে পারি। এর কারণ কী?
স্টিফেন আর. কোভি এর পূর্ণ নাম স্টিফেন রিচার্ডস কোভি। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন ১৯৩২ সালের ২৪শে অক্টোবর। জন্মগতভাবে তিনি একজন আমেরিকান। তিনি একাধারে একজন শিক্ষক, লেখক, বক্তা ও ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বক্তব্যগুলো মূলত অনুপ্রেরণাদায়ী, যাকে আমরা বর্তমানে ‘মোটিভেশনাল স্পিচ’ নামেই বেশি চিনি। স্টিফেন আর কোভি এর বই সমূহ হচ্ছে ফার্স্ট থিংস ফার্স্ট, দ্য লিডার ইন মি, দ্য এইটথ হ্যাবিট, প্রিন্সিপ্যাল-সেন্টার্ড লিডারশিপ, দ্য থার্ড অল্টারনেটিভ ইত্যাদি। তাঁর প্রথম বই ছিল স্পিরিচুয়াল রুটস অফ হিউম্যান রিলেশনস (১৯৭০)। এটি ডেসেরেট বুক কোম্পানি থেকে প্রকাশ পায়। তাঁর পরবর্তী লেখাগুলোর পূর্বাভাস হিসেবে এই বইটিকে ধরা যায়। স্টিফেন আর. কোভি এর অনুবাদ বইগুলোর মাধ্যমে তাঁর অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্য বিশ্বজোড়া মানুষের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। বাংলা ভাষাতেও তাঁর বই অনূদিত হয়েছে। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় বই হলো ‘দ্য সেভেন হ্যাবিটস অফ হাইলি ইফেক্টিভ পিপল’। স্টিফেন আর. কোভি এর বই সমগ্র বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত, কারণ তিনি তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে মানুষকে অনুপ্রেরণার ছোঁয়া দিতে পেরেছেন। ১৯৯৬ সালের টাইমস ম্যাগাজিন বিশ্বের ২৫ জন সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে তাঁকে রাখে। ২০০৮ সালে তিনি স্টিফেন কোভি অনলাইন সম্প্রদায় গড়ে তোলেন। ২০১২ সালের ১৬ জুলাই কোভি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময়ে তিনি উটাহ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জন এম. হান্টসম্যান স্কুল অফ বিজনেসের অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর পড়াশোনাও ব্যবসায় অনুষদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তবে একটা সময় আমেরিকান সেলফ হেল্প বইগুলো পড়ে তাঁর মাথায় চিন্তা আসে যে, এভাবে তিনি অনেককেই হয়তো অনুপ্রাণিত করতে পারবেন। তিনি পিটার ড্রাকার ও কার্ল রজার্সের দ্বারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেকটা প্রভাবিত ছিলেন।