কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯) ছিলেন উনিশ শতকের বিখ্যাত কবি ও সুবিখ্যাত ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার সম্পাদক। পত্রিকা সম্পাদক হিসেবে তিনি যেমন সুনাম অর্জন করেছিলেন তেমনই বাংলার বিভিন্ন জনপদ ভ্রমণেও বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেন। তিনি দেশভ্রমণকে সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা মনে করতেন। তাঁর ভ্রমণপিপাসু মনের পরিচয় মেলে—কলকাতা জীবনের তীব্র কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে নৌকাযোগে পূর্ব ও উত্তর বাংলার নদীমাতৃক স্নিগ্ধ-শ্যামল মফস্বল এলাকা সফর। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১২৬১ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র মাস নিম্নবঙ্গ ভ্রমণ করেন। সময়টা ছিল ইংরেজি ১৮৫৪ সাল। তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ ভ্রমণ আলেখ্যটি সমসাময়িককালে তাঁর সম্পাদিত সুবিখ্যাত ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় ‘ভ্রমণকারিবন্ধুর পত্র’ নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এ নৌভ্রমণে প্রধানত তিনি পূর্ববঙ্গের জনপদ, জনমানুষ, লোকাচার, লোকস্বভাব, যাপিত জীবন ও উনিশ শতকের পূর্ব বাংলার জমিদার-রায়ত সম্পর্কে একটি নিখুঁত ও চিন্ময় বাস্তব তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। নদীপথে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল উত্তরবঙ্গের রাজশাহী থেকে। কবির পূর্ববঙ্গ সফর দীর্ঘদিন ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার জরাজীর্ণ পাতায় লোকচক্ষুর অন্তরালেই ছিল। তিনি ‘পক্ষীর দৃষ্টিতে’ এটিকে ভ্রমণ সাহিত্যের উপজীব্য করেছেন। কবির দৃষ্টি ছিল সম্পাদকের নয়, পর্যটকের। কবির ভ্রমণস্থল ছিল রাজশাহী, পাবনা, ঢাকা ও ঢাকা কলেজ, বরিশাল, ভুলুয়া (নোয়াখালী), কুমিল্লা, ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম। উনিশ শতকের মধ্যভাগে, সিপাহি যুদ্ধেরও আগে, এসব জনপদের মানুষের বহুবিচিত্র জীবনযাপন, বেশভূষা, লোকাচার, সামাজিক আখ্যান, রীতি-নীতি, স্থান নামের বুৎপত্তি এবং নদীতীরবর্তী সমাজ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণির রাজকর্মচারী ও পেশাজীবীদের কর্মজীবনের এক নিখুঁত কলমী চিত্র তুলে ধরেছেন তাঁর ভ্রমণ কাহিনিতে। এ যেন কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের চোখে উনিশ শতকের পূর্ববঙ্গের এক বিচিত্র আলেখ্য। এটি মূলত মূল লেখার একটি ‘প্রতিলিপি সংস্করণ’ যা বইটির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে এবং উনিশ শতকের মধ্যভাগের পূর্ববাংলার সাথে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের সবিশেষ পরিচয় ঘটাবে নিঃসন্দেহে।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (৬ মার্চ ১৮১২ - ২৩ জানুয়ারি ১৮৫৯) ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক । ... তিনি "গুপ্ত কবি" নামেও পরিচিত ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সহ তাঁর পরবর্তী বহু সাহিত্যিক ঈশ্বর গুপ্তকে 'গুরু'পদে বরণ করেন।