রাতের রোদ্দুরে-এর কবিতার উপজীব্য বহুমাত্রিক। ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, নৈসর্গিক সবকিছুই রয়েছে। কবিতার পঙ্ক্তিমালায় গল্পের সঙ্গে কাব্যের ভাবগাম্ভীর্যের সংশ্লেষ ঘটানো হয়েছে যা কবিতাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। প্রেম-অপ্রেম, ভালোবাসা-তিক্ততা, বিষাদ-নিঃসঙ্গতার পীড়নে কবি প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত হন। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতির অস্থিরতা অনুঘটকের ভূমিকায় থাকে। কবিতার বুননে, শব্দে, ছন্দে কাব্যগ্রন্থের পঙ্ক্তিমালায় তা প্রতীয়মান। তাঁর কবিতায় শব্দের শক্ত বুননের সঙ্গে উপমা-প্রতীক-রূপক ইত্যাদির ব্যবহার লক্ষণীয়‘দোটানা মানুষ দোচালা টিনের ঘর’ (রাতের রোদ্দুে র); অথবা ‘পুঁজিবাদী প্রেমের পশরা নিয়ে আহামরি’ (জীবন)। আবার সাদামাটা গল্পে ‘বনে বনে মাছরাঙা মায়াবী মৌটুসী’ (রাতের রোদ্দুরে); অথবা ‘এই ঘর এই নীল আলো আর তুমি’ (অনিবার্য)। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও সোনার বাংলা বিনির্মাণের দীর্ঘ পরিমায় একজন একনিষ্ঠ সহযোগী কবি মোশাররফ শরিফ। তাঁর কবিতায় শিল্পের রূপে, সৃজনধর্মিতায় উঠে এসেছে রাজনীতি‘১৫ আগস্ট ১৯৭৫! ইতিহাসের নৃশংসতম কালো রাত, বঙ্গবন্ধুসহ বঙ্গবন্ধু পরিবার নিশ্চিহ্ন করার রাত’ (শেখ কামাল: এক নিঃশব্দ ভায়োলিন)। জীবনযাপনের বর্ণাঢ্য উঠানামার সঙ্গে আজন্ম স্বপেড়বর- আদর্শের লালন-ধারণ একটি কষ্টসাধ্য বাস্তবতা। কবি মোশাররফ শরিফ শৈল্পিক বুননে একরাশ শব্দগুচ্ছের সুন্দর প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাঁর রাতের রোদ্দুরে কাব্যগ্রন্থে।