বাংলা সাহিত্যে প্রথম ভৌতিক কাহিনি লেখেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এরপর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিম তাঁর লেখা একমাত্র ভৌতিক কাহিনি অসমাপ্ত রেখে মারা যান। প্রাথমিকভাবে ভৌতিক কাহিনির লেখক হিসেবে এই দুজনের নামই পাওয়া যায়। এঁদের পর ভৌতিক কাহিনির নতুন রূপকল্প নিয়ে হাজির হন রবীন্দ্রনাথ। সার্থক ভূতের গল্প বলতে যা বুঝায়, তার সূচনা তাঁর হাত ধরেই। বলা যায়, বরীন্দ্রনাথই বাংলা সাহিত্যে ভৌতিক গল্পের প্রকৃত পথিকৃৎ। তাঁর রচিত ক্ষুধিত পাষাণ, মণিহারা, নিশীথে প্রভৃতি গল্প পড়ে গা ছমছম করে উঠেনি, এমন পাঠক মেলা ভার। রবীন্দ্রনাথের পথ ধরেই পরবর্তীকালে ভৌতিক গল্প লেখেন প্রমথ চৌধুরী, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, পরশুরাম, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, হাসান আজিজুল হক, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব প্রতিভাবান লেখকই ভুত নিয়ে লিখেছেন, ভেবেছেন এবং ভূত নামানোর জন্য নানামুখী আয়োজনও করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ তো তাঁর বাসায় ভূত নামানোর আসর বসাতেন। এমনকী আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো লেখকও ভূতের আছর থেকে মুক্ত হতে পারেননি। যে ভূত নানাভাবে সর্বত্র বিরাজমান, সে ভূতই এখন আর ভয় জাগাতে পারছে না মানুষের মনে! কারণ, চারদিকে এত আলোর ভিড়ে ভূতের দল তাদের সবটুকু শক্তি নিয়ে স্বরূপে আবির্ভূত হতে হিমশিম খাচ্ছে। তাহলে কি বাংলার জমিন থেকে ভূত বিলুপ্ত হয়ে যাবে? ভয় পাবে না বাঙালি? না, এ হতে পারে না। হারিয়ে যাওয়া ভূতদের ফিরিয়ে আনতে এবং জনমনে ভয় জাগিয়ে দেওয়ার সুব্যবস্থা করতেই এ সংকলনের উদ্যোগ। এতে স্থান পাওয়া প্রতিটি গল্প পাঠ করে আবারও গা ছমছমে ভৌতিক অভিজ্ঞতা যেমন লাভ করা যাবে, তেমন বিচিত্র সব ভূতের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডাও বসানো যাবে। সবাইকে ভূত ও ভয়ের জগতে স্বাগত!