প্রিয় শুভাকাঙ্খীদ্বয়, আমি বরাবরই একজন আনন্দপ্রিয় গল্পবাজ মানুষ, আমার বিষয়ে একটি অজানা কথা হলো, যে কথা কেউ তেমন জানেন না তা হলো আমি সবচেয়ে বেশি গল্প করি নিজের সাথে। একা একা কতকিছু নিয়ে যে মনে মনে আলোচনা করি, তা লিখে প্রকাশ করতে গেলে এই ভূমিকা সুখপাঠ্য হবে না। আমার অধিক পরিমাণে বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী থাকলেও নিজ সত্ত্বার সাথে কথা বলে আমি তৃপ্ত হই, ভালোলাগার আবেশে সিক্ত হই। তবে আমার জীবনে আরেকটি ভালোলাগার বিষয় হলো ‘চিঠি’। ছোটবেলায় প্রথম ঘটা করে আব্বাকে চিঠি লিখেছিলাম পেন্সিল দিয়ে, সেসময় আব্বা বাহরাইন নামক দেশে থাকতেন। সেই যে চিঠির বীজ মাথায় ঢুকেছিলো এখনও আমি বহু চিঠি লিখি কারণে-অকারণে। আমার গল্প বলার ঢং শুনেই সবাই বোঝে আমি বাকপটু এবং বই প্রিয় মানুষ। তাই আমি যখন একটি বই নিয়ে কাজ করবার সুযোগ পেলাম তখন পত্র সাহিত্য নিয়েই লেগে পড়লাম। ২০১৮ সালে ‘দূরাগত বাতাসের চিঠি’ সম্পাদনা করলাম। বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিলো বইটি। ২০২৪ সালে এসে আমার মনে আবার পত্র সাহিত্য নিয়ে কাজ করবার লোভ হলো, সেই ধারাবাহিকতায় আমি এবার একটু বিষয়ভিত্তিক চিন্তা জুড়লাম চিঠির সাথে। হাসপাতালের বিষয়ই কেন বাছাই করলাম সে সে প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আপনাদেরকে অবগত করছি। ২০২৩ সালের শেষ দিকে যখন আমাদের দেশে ডেঙ্গু জ্বর খুব মারাত্মক আকার ধারণ করলো, রোজ পত্রিকার পাতায়, ভার্চুয়াল অনলাইন নিউজে হাসপাতালগুলোর অবস্থা শুনতে শুনতে একদিন নিজেও ডেঙ্গু পজিটিভ হয়ে আইসিউতে ঠাঁই নিলাম। সেই দুঃসময় এখনো আমাকে তাড়া করে। ইস্! সেসময় শুধু কথা বলার জন্য মন আকুপাঁকু করতো। লিখার মতোও অবস্থা ছিলো না আমার কিন্তু সুস্থ হয়েই ভাবলাম, এই হাসপাতালের স্মৃতি, অভিজ্ঞতা নিয়ে পত্র-গুচ্ছ করলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। সাথে সাথে আমি বন্ধুদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করলাম এবং আমাকে অবাক করে বহু চিঠি আসা শুরু হলো। আপনারা যারা চিঠিগুলো পড়বেন, মনে হবে যেন হাসপাতালের রোজনামচা পড়ছেন। চৌত্রিশ জনের অভিজ্ঞতার ঝুলির রঙ আলাদা। কারো সুখানুভূতি আবার কারো দুঃখনাভূতি। আসুন পাঠক, আমরা বইয়ের পাতায় অসংখ্য চিঠির গভীরে যত্ন করা হাসপাতালের ফিনাইলের গন্ধে ডুবে যাই। সবাইকে এই চৌত্রিশটি জীবনের অভিজ্ঞতার শাব্দিক আয়োজনে সঙ্গী হবার জন্য আহ্বান করছি। সমর্পিত পাঠাকদের জন্য শুভ কামনা রইলো! সম্পাদক রূপা খানম