জলজ শ্যাওলার অন্তর্লিন বিষন্নতার ভায়োলিন বেজে চলে যে স্পর্শাতুর ছন্দে তার হৃদয়গভীরে কান পেতে তুলে আনা সহজ সুরের গহন অনুভব রাজেশ ধরের গল্পের প্রাণভোমরা। যে জীবন সহজ অথচ গভীর, আলোড়নহীন অথচ মায়াবী তার অদেখা কথামালা লেখকের প্রতিটি গল্পে নিজস্ব গল্পভাষায় বর্ণিত হয়েছে। মহানগরী কলকাতার নাগরিকজীবন ও কর্মসূত্রে দীর্ঘ ষোলো বছরের জন্য ইছামতির পারে মফস্বল শহর বসিরহাটে যাপিত সময়, সবকিছুর নিবিড় অনুভব ধরা পড়ে তাঁর গল্পে। এই বইয়ের ১২টি গল্পে অসামান্য কিছু চরিত্র লেখক তুলে এনেছেন যারা এলিট সভ্যতার কেউ নয়, তাদের জীবনকথার বর্ণনাই লেখকের সেই অনুভবের প্রমাণ। বইটিতে ‘দালাল’, ‘আলোমানুষ’, ‘চোখের জল’, ‘পালার নাম কাঁদনির কান্না’ ইত্যাদি গল্পের মধ্য দিয়ে জীবনের সরলরৈখিক দৃষ্টির বাইরে এসে এক গভীর সংবেদনশীল জীবনদর্শনের শরিক হয়ে যায় পাঠক। নাগরিক মানুষের হিপোক্রেসির নগ্ন রূপকে লেখক অসামান্য নির্মাণনৈপুন্যে তুলে আনেন ‘কুঁড়ো বিবির দিঘি’, ‘গুল্টের সাথে মোলাকাত’ শীর্ষক গল্পে। নাগরিক দানবের থাবায় মাতৃস্বরূপা নদীর করুণ মৃত্যু নির্মাণ করেছে ‘চুপিকথা’ গল্পের প্রেক্ষাপট। অন্তর্জগৎযাত্রায় দিশাহীন মানুষের ভিন্ন এক অনুসন্ধান ‘কুন্দেশ-সন্ধান’ গল্পটি। বৈষ্ণবীয় পরিমণ্ডলের মধ্যে বেড়ে ওঠা শত আঘাতেও চোখের জল না ফেলা মেয়েটির মর্মন্তুদ পরিণতির গভীর আখ্যান ‘চোখের জল’। ‘বাসু মাস্টার’ যেমন গ্রাম-শহুরে জীবনের দ্বন্দ্বের মাঝে ফেলে দার্শনিক প্রশ্নে জর্জরিত করে আবার ‘দুই তিতলির বাসা’ গল্পে কন্যা-সন্তান বাবার বুকে প্রজাপতি হয়ে উড়তে উড়তে, এই অবক্ষয়ের প্রতিবেশে বাবা-মেয়ের সম্পর্ককে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়ে আসে পাঠকের সামনে। গল্পগুলির যাত্রার শেষে পাঠক পৌঁছে যাবেন অদেখা অ্যাঙ্গেলে দেখা, চেনা হয়েও অচেনা ইউনিক চরিত্রদের জীবনগল্পে।