শোকের পাথর বুকে চেপেই এদের কাজে নামতে হয়। কতো শোক এলো গেলো এদের জীবনে! এই তো সেদিনের কথা, মাস চারেক হবে- ছবির খোঁড়ার ছোট ছেলেটা পানিতে ডুবে মরলো। বছর পাঁচেক বয়স হবে। তারপর দেড় বছর হলো, মালতি বুড়ি মরে গেলো। তার মাস তিনেক আগে জসিম গোয়াল চলে গেলো। আর এদের প্রাণে সারাক্ষণ কাঁটার মতো যা ফুটতে থাকে তা হলো পিয়ার পাগলা। গেলো পৌষের মেলায় গিয়ে সে আর ফিরেনি। পাগল বলে তাকে সবাই চোখে চোখেই রাখতো, তারপরও কখন জানি সবার চক্ষুর আড়ালে মেলায় যায়। পাশের গাঁয়ের খগেন মাঝি তাকে মেলায় দেখেছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করেছে এরা। আর পায়নি। মৃত্যুর তাও তো একটা ঠিকানা আছে, হারানোর কোনো ঠিকানা নেই। সকল শোকের হিসাব আর আর্তনাদ এদের মনের ঘাটে ছ্যাতলার মতো লেপটে থাকে, মাঝে মাঝেই এরা পিছলে পড়ে, কিন্তু এরা জানে, এদের ধ্যান-জ্ঞান সবকিছুর মূলে একটাই কথা, একটা সত্য প্রতিদিনের সূর্যের মতো উদিত হয়- কাজ- কাজ না করলে এরা কেউ বাঁচতে পারবে না- কাজ আর মরণ এদের কাছে সমার্থক। এই পৃথিবীর আর কোনো খবর এদের কাছে নেই, এরা শুধু জানে, এদের স্রষ্টা এদেরকে গতরটা দিয়েছে শুধুমাত্র খেটে খাওয়ার জন্য- কোনো সময় নেই, কোনো সীমা নেই, যতোক্ষণ পারো খাটো আর দু'মুঠো অন্ন যোগাড় করো।