বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শামসুর রহমান ১৯৭১ এ ছিলেন কলেজ ছাত্র। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেরি করেননি। কারণ, আগে থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন। স্কুলজীবনেই যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে। স্থানীয় শৈলকুপা থানা ও হাকিমপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন। ’৬৯—এর গণঅভ্যুত্থান ও ’৭০—এর নির্বাচনেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। তরুণ কলেজ ছাত্র শামসুর রহমান ১৯৭১—এর ৩ মার্চ নিজ এলাকার আনসার কমান্ডার বিশারত আলীর কাছে ট্রেনিং নিয়ে তাঁরই নেতৃত্বে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের শেষদিকে হানাদার মুক্ত করেন শৈলকুপার মাটি, যেখানে তিনি বেড়ে উঠেছেন। শৈলকুপা মুক্ত হয় ৮ ডিসেম্বর। এ গর্বের দিনটি এবং নিজ এলাকার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর বীরত্বের আখ্যান। দেশ স্বাধীন হলে তিনি আবার পড়াশোনায় মনোযোগী হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. কম. ডিগ্রি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। যাঁর ডাকে তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে তিনি যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করতে থাকেন। ১৯৭২ এ তিনি পৈতৃক জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন জালশুকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন স্থানীয় পাবলিক লাইব্রেরি, মিলনায়তন, ডায়াবেটিক সমিতি ও প্রবীণ হিতৈষী সংঘ প্রতিষ্ঠায়। এলাকার সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ, খেলার মাঠ উন্নয়ন ও বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরিতেও অবদান রাখেন। ১৯৭১—এ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্মৃতিচারণ ও তাঁর দীর্ঘ সফল কর্মজীবন বইটির মূল উপজীব্য। শামসুর রহমানের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক ধারাকে বোঝার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বিশেষ করে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বর্ণনায় কুষ্টিয়া—ঝিনাইদহের বেশ কয়েকটি যুদ্ধের ইতিহাসের সন্ধান বাড়তি পাওয়া। লেখকের জন্ম ০৯ জানুয়ারি ১৯৫৪ সালে। শৈশব—কৈশোর কেটেছে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার জালশুকা গ্রামে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ও ভারতের মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন সায়েন্সস (ওওচঝ) থেকে পপুলেশন সায়েন্সে ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৫ সালে পরিকল্পনা কমিশন থেকে উপ—সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। কর্মজীবনে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও শিক্ষা সফরে অংশ নেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় বসবাস করছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন। ব্যক্তিজীবনে তাঁর স্ত্রী রাশিদা আফরোজা খাঁন আভা অবসরপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। তাঁদের দুই কন্যা ও এক পুত্র। কন্যাদ্বয় শামীমা আফরোজ তৃনা পেশায় ক্যানসার চিকিৎসক এবং সারওয়াত শামীন তৃষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শিক্ষক। ছেলে শাফায়াত রহমান শান অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করছেন।